শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়: ক্যাম্পাসে যাওয়ার আগেই স্নাতক শেষ
নেত্রকোনাঃ নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে। শহরের রাজুরবাজার এলাকায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) দুটি ভবন অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেই ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে করতেই স্নাতক শেষ হতে যাচ্ছে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষ হওয়ার আগে তাঁদের ঝুঝি আর স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া হবে না।
কেননা স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য ৩৯টি প্যাকেজে যে ২৫টি ভবন হওয়ার কথা তার মধ্যে ১১টির দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকিগুলোর এখনো দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি। আর দরপত্র আহ্বান করা ১১টি কাজের মধ্যে পাঁচটি ভবনের পাইলিংয়ের কাজসহ প্রায় ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি ছয়টির কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
প্রকল্পের ভবন নির্মাণে দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, প্রকল্প এলাকায় এখনো মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে ভবন নির্মাণের কাজে বিলম্ব হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি পাস হয়। ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সীমান্তবর্তী হাওরাঞ্চলের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের জন্য নেত্রকোনা শহরের অদূরে রাজুরবাজার এলাকায় সদর উপজেলার কান্দুলিয়া, রামপুর, ময়মনসিংহ রুহী, সহিলপুর, রায়দুম রুহী ও গোবিন্দপুর মৌজায় কুড়িয়া বিলে ৩০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৯৮.৪৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই বিলে মাটি ভরাট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন পায়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুই হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।এর মধ্যে ভূমি উন্নয়নে বরাদ্দ ২৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ১০ তলাবিশিষ্ট তিনটি একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ১০ তলার দুইটি ছাত্রী ও দুইটি ছাত্র হল, শিক্ষকদের জন্য একটি ১০ তলা ডরমিটরি ভবন, একটি চার তলার প্রশাসনিক ভবন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১০ তলা আবাসিক ভবন, উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের জন্য দুই তলাবিশিষ্ট দুইটি ডুপ্লেক্স বাংলো, একটি তিনতলা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন, চার তলার একটি মেডিক্যাল ও ডে-কেয়ার সেন্টার, পাঁচতলাবিশিষ্ট স্টাফ স্কুল ও কলেজ ভবন, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের জন্য একটি চারতলা ভবন, মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণসহ মোট ২৫টি ভবন নির্মাণ।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালের শিডিউল রেটে দরপত্র আহ্বান করলে ঠিকাদাররা কাজ করবেন না। এ জন্য ২০২২ সালের নতুন রেট অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে বাকি কাজের দরপত্র আহ্বান করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভূমি উন্নয়নকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। মেসার্স নুরুজ্জামান খান নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী গত ২৩ মার্চ কাজের সময়সীমা শেষ হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজ এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ বাকি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় কংস নদী থেকে বালু উত্তোলন করে মাটি ভরাটের কাজ করছিল। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকায় স্থানীয় প্রশাসন নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এ কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ বন্ধ।
সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছাত্রাবাস নির্মাণের জায়গায় কোনো মাটি পড়েনি। ওই জায়গায় এখনো বিলের গভীর পানি।
প্রকল্প প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা জানান, দরপত্রের নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় কয়েকটি কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
প্রকল্পের প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস নির্মাণকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি (সাইট ইঞ্জিনিয়ার) কামরুল ইসলাম জানান, প্রকল্পের কাজের ধীরগতির প্রধান কারণ ভূমি উন্নয়ন। সময়মতো ভূমি উন্নয়ন না হওয়ায় ভবন নির্মাণের কাজ এগোচ্ছে না। গত ১৪ মে ছাত্রী নিবাস নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। অথচ ওই জায়গায় এখনো কোনো মাটি ফেলা হয়নি। বিলের পানিই রয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, সামাজিকবিজ্ঞান ও প্রকৌশল—এই তিনটি অনুষদের অধীনে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি এবং কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩৫। এর মধ্যে ছাত্রী ৪০ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেষ বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলেন, বুক ভরা আশা নিয়ে তাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় শ্রেণিকক্ষ, আবাসন, ক্যান্টিন, খেলাধুলা, সংস্কৃতিচর্চাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কারিগরি প্রশিক্ষণ ভবনে অনার্সের শিক্ষাজীবন শেষ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো স্বাদ পেলেন না।
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নে নদী থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতির জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের রেট শিডিউল সংশোধন করে ২০২২ সালের রেট শিডিউল অনুমোদনের জন্যও মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এগুলোর অনুমোদন পেলে কাজের গতি বাড়বে।’
শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম কবীর বলেন, ‘ভবনসংকটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমি যোগদান করেছি এক বছর হয়েছে। এর পর থেকেই চেষ্টা করছি প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে। আশা করছি ২০২৪ সালের জুন মাস নাগাদ নিজস্ব ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’ সূত্রঃ কালের কণ্ঠ
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়