শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ সরকারের
নিউজ ডেস্ক।।
দেশে ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা বা ই-কমার্স ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর পুরো খাত এখন ভুগছে আস্থার সংকটে। খুব অল্প সময়ে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে পুরো খাতটির ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
তবে দেরিতে হলেও নজর দিয়েছে সরকার। সরকার গ্রাহক স্বার্থ সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। এ খাতকে শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে আইন প্রণয়ন ও রেগুলেটরি অথরিটি গঠনে ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দুটি কমিটি এবং একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটির বৈঠক হয়েছে। অন্যদিকে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকি ও পরিবীক্ষণের আওতায় আনার কৌশল নির্ধারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানকে সভাপতি করে আরেকটি কমিটি করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ই-কমার্স খাতে ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে সিরিজ বৈঠক করতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম বৈঠকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তদারকি ও পরিবীক্ষণের আওতায় আনার কৌশল নির্ধারণ করা হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, পুলিশের প্রধান কার্যালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, বৈঠকে কীভাবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য, সম্পদের বিবরণ, ব্যাংক হিসাবের স্থিতি এবং অর্থ ও সম্পদ উদ্ধারের পদ্ধতি নির্ধারণ; ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও পরিবীক্ষণের জন্য ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণ; ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে তদারকি এবং এগুলোকে করের আওতায় আনার কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, অন্যদিকে ১৯ অক্টোবর ই-কমার্স আইনের খসড়া এবং রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের কাঠামো নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া ২১ অক্টোবর প্রতারণা থেকে গ্রাহকদের সুরক্ষা ও ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে শুরু হওয়া ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভোক্তা ও বিক্রেতার অসন্তোষ এবং প্রযুক্তিগত সমস্যা নিরসনে গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠক হবে। বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠক হবে। বৈঠকে ডিজিটাল কমার্সসংক্রান্ত সব কার্যক্রম, ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা করা, লেনদেনজনিত ভোক্তা বা বিক্রেতা অসন্তোষ ও প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে।
অন্যদিকে লাইসেন্সবিহীন পেমেন্ট গেটওয়ে ফস্টারের বিরুদ্ধে কিউকমসহ বিভিন্ন ই-কমার্স কোম্পানির বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের অভিযোগ পাওয়ার পর গেটওয়েগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নতুন আইন প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ই-কমার্স কেনাকাটায় এসক্রো সার্ভিস বাধ্যতামূলক করার পর হঠাৎ করেই বিপুল পরিমাণ অর্থপ্রবাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া পেমেন্ট গেটওয়ে সেবাদান নিষিদ্ধ করে আইনের খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস অ্যাক্ট ২০২১ আইনের খসড়া অনুযায়ী, এর আওতায় সংঘটিত অপরাধ ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আইন লঙ্ঘনের দায়ে মামলা হলে তা জামিন অযোগ্য হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছরের কারাদ- ভোগ করতে হবে।
অন্যদিকে ই-কমার্স কোম্পানি বা গেটওয়েগুলোয় গ্রাহকের আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়ার উপায় বের করাসহ নতুন করে কোনো কোম্পানি যেন প্রতারণা করতে না পারে, সে জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।
এ ছাড়া যেসব ই-কমার্স কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান রয়েছে, তাদের সঙ্গে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর লেনদেন ও ক্রেতাদের রিফান্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করতে একটি নীতিমালা প্রণয়নের কাজও শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সারা বিশে^ ই-কমার্স চালু রয়েছে। ইতোমধ্যে এ ব্যবসার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাণিজ্য পরিচালিত হবে। করোনাকালে ই-কমার্স সুনাম অর্জন করেছে, মানুষ উপকৃত হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অসৎ ব্যবসা ও প্রতারণার কারণে সব ই-কমার্স বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ না পায়, সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রতারণা বন্ধে ই-কমার্স আইন প্রণয়ন করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা কার্যকর হওয়ার পর প্রতারণা বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যে গ্রাহকদের প্রতারিত করেছে, ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সে বিষয়ে আরও কি করা যায়, সরকার তা পরিক্ষী-নিরীক্ষা করছে।