শুধু ছবি তুললে হবে না ভাত চাই
নিজস্ব প্রতিনিধি।।করোনাভাইরাসের মহামারিতে স্থবির হয়ে উঠেছে জনজীবন । খেটে খাওয়া মানুষের হাহাকার শুরু হয়ে গেছে।
এই খেটে খাওয়া মানুষের দিনচিত্র নিয়ে কথা বলে আমাদের প্রতিনিধি। কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো-
মালিবাগ রেলগেট, ঝিলপাড়, কমলাপুর, রামপুরা, বাড্ডা, ফকিরাপুল ও মোহাম্মদপুর ঘুরে নিম্নআয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে একই হতাশা আর অনিশ্চয়তার ছবি।
রংপুরের সাবেদ মিয়া ঢাকায় আসেন রিক্সা চালাতে । গত সাত দিন বস্তির ছোট্ট ঘরে কর্মহীন কেটেছে তার। পেটের তাগিদে মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম মালিবাগের বাগানবাড়ি এলাকায় রিক্সা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, 'কী করব স্যার, যাত্রী পাই না । কিন্তু এভাবে থাকলে তো পেটে ভাত জুটবে না। পেটের দায়ে বের হয়েছি।
আরেক রিকশাচালক আব্দুর রহিম থাকেন যাত্রবাড়ি । ষাট বছর বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হয় বেঁচে থাকার তাগিদে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় তাকে মৌচাক মোড়ে বসে থাকতে দেখা গেল যাত্রীর আশায়।
আক্ষেপ করে বললেন, ''বুড়াকালে আইসা এঠা কী দেখতেছি বাবা জান। ডাক দিলেও প্যাসেঞ্জার রিকশায় উঠতে চায় না। কম ভাড়ার কথা কইছি, এরপরও কয় 'যামু না'।" রোজগার এভাবে বন্ধ হয়ে গেলে ছেলেমেয়েকে কী খাওয়াবেন, সেই চিন্তায় দিশা পাচ্ছেন না তমিজউদ্দিন।
মৌচাক মোড়ে একটি রিকশার গ্যারেজের ভেতরে বসে ছিলেন আখলাক মিয়া, সঙ্গে তার বানর 'রূপবান'। বানর নাচিয়েই তার দিন চলে। আর স্ত্রী বিভিন্ন বাসায় গিয়ে করেন গৃহকর্মীর কাজ।
আখলাক জানালেন, গত সাতদিন ধরে তার রোজগারের পথ একেবারেই বন্ধ। তার স্ত্রীকেও কাজে যেতে মানা করেছেন বাড়ির মালিকরা।
তিনি বলেন, ''তাইলে চলমু কেমনে বলেন? আমার উপার্জনের শক্তি এই বান্দর, তারে 'রুপবান' বইলা ডাকি, তারেও খাবার দিবার পয়সা নাই। শিকল দিয়া বাইন্দা রাখছি সাতদিন হয়। আমরা আর রূপবান সবতেই বন্দি।"
এক সপ্তাহ আগেও তাদের কেউ প্রতিদিন রিকশা-ভ্যান নিয়ে বের হতেন, কেউবা দিন চুক্তির মজুরিতে কাজ করতেন। অনেকে আবার বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে চালাতেন সংসার।
রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি কিংবা টিনশেড ঘরে এসব খেটে খাওয়া মানুষের বসবাস। দিনের কাজের টাকায় তাদের বাজার হয়, চুলায় হাড়ি চড়ে। তাদের সেই দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনেও ছন্দপতন ঘটিয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি।