দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা, অপ্রত্যাশিত ফলাফল প্রসঙ্গে
রেজাউল করিম খোকন : সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল। আপাতদৃষ্টিতে পরীক্ষার ফল নিয়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার অবসান হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রকাশিত এইচএসসি পরীক্ষার ফল বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, খামখেয়ালিপনা, অসহযোগিতার ন্যক্কারজনক প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মারাত্মক হয়রানি, মানসিক চাপ ও বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
দেশে যখন শিক্ষার প্রসারে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তখন বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের চরম খামখেয়ালি, দায়িত্বহীনতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অসহযোগিতা আমাদের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। এ প্রসঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়া এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর ভোগান্তির কথা তুলে ধরছি। সে গত ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন একটি স্বনামধন্য কলেজ হতে অংশগ্রহণ করে। সম্প্রতি ঘোষিত ফলাফলে উক্ত শিক্ষার্থী মেয়েটি যে গ্রেড লাভ করেছে, তা ছিল তার এবং তার পরিবারের জন্য সম্পূর্ণরূপে অপ্রত্যাশিত।
অপ্রত্যাশিত ফলাফলে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় তার গোটা পরিবার। ভুক্তভোগী উক্ত শিক্ষার্থী তার প্রাপ্ত ফলাফল মেনে নিতে পারেনি কোনোভাবেই। পরীক্ষার মার্কশিট হাতে পেতেই দেখা যায়, মোট ৬টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে একটি বিষয়ে শিক্ষার্থীকে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। অনুপস্থিত দেখানোর কারণে তার ফলাফলপত্রে উক্ত বিষয়ে কোনো ফলাফল আসেনি। ফলে তার সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে নি¤œতর গ্রেড লাভ করেছে সে, যা মোটেও তার কাম্য নয়। অনুপস্থিত দেখানো বিষয়টির দুটি পত্রের লিখিত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় সে অংশগ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রে সে উপস্থিতির স্বাক্ষরও করেছে। অথচ তার অংশ নেয়া বিষয়ে অনুপস্থিতি দেখিয়ে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে তার প্রকৃত ফল না এসে নিন্মতম গ্রেডের ফল এসেছে। এতে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী চরম হতাশা, অনিশ্চয়তা, মানসিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। পাশাপাশি তার পরিবারের সবাই, অভিভাবকদের মারাত্মক হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়েছে। যখন তার সহপাঠী অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাশিত ফলাফল লাভের সাফল্য উপভোগ করছে, তখন তাকে এক ধরনের হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হতে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজন পরীক্ষার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গৃহীত পরীক্ষার কাগজপত্র পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-শিক্ষকদের অবহেলা, গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে নথিভুক্ত হয়নি। যে কারণে তারা উক্ত বিষয়ের দুইপত্রে লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও তা মূল ফলাফলে যুক্ত হয়নি বরং বাদ পড়ে গেছে। এতে তাদের ফল অপ্রত্যাশিতভাবে নি¤œতর গ্রেডে এসেছে।
আমাদের প্রশ্ন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-শিক্ষকদের এ চরম দায়িত্বহীনতার, গাফিলতি ও অবহেলার কারণে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের যে মানসিক হয়রানি, হতাশা, যাতনার শিকার হতে হলো তার দায় কে নেবে? আমি যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কথা উল্লেখ করেছি তার পরিবার, অভিভাবক শিক্ষিত এবং সচেতন হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষের অবহিত করেছেন বলে এ ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের পর ভুক্তভোগীর দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় এনে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছেন কর্তৃপক্ষ। এখন প্রশ্ন, যদি কোনো শিক্ষার্থীর অভিভাবক তেমন শিক্ষিত, সচেতন কিংবা সামাজিকভাবে প্রভাবশালী না হন তাহলে পরীক্ষা গ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও বোর্ড কর্মকর্তার অবহেলা, গাফিলতির কারণে তাদের সন্তান তেমন ভোগান্তির শিকার হন, প্রত্যাশিত ফলাফল লাভে ব্যর্থ হয় তাহলে তা আড়ালেই রয়ে যাবে? তারা তাদের প্রাপ্য ফলাফল লাভে ব্যর্থ হয়ে অনিশ্চিত এক জীবনের দিকে ধাবিত হবে? এরকম বহু ঘটনার বিবরণ আমরা প্রায়ই পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখতে পাই। এ ধরনের ঘটনার শিকার বহু শিক্ষার্থীর সম্ভাবনাময় শিক্ষাজীবন চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে ইতোমধ্যে।
শিক্ষাকার্যক্রম একটি নিবিড় তদারকির বিষয়, সন্দেহ নেই। এখানে গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, অবহেলা, অব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। যারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে, চরম হতাশা, অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করছে, তাদের অবশ্যই বিচার ও জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার বলে মনে করি। বর্তমান আধুনিক সমাজব্যবস্থায় মানবসম্পদকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকলেও মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার ঘটিয়ে একটি দেশ বিপুল সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
জাপান, তাইওয়ান ও কোরিয়া তার উজ্জ্বল উদাহরণ। আমাদের দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের ছড়াছড়ি নেই। তবে মানবসম্পদকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ, অভিজ্ঞকরে তুলতে না পারলে আগামী দিনগুলোতে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী যদি শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের অবহেলা, দায়িত্বহীনতা, খামখেয়ালির কারণে পরীক্ষায় তার পরিশ্রমলব্ধ উপযুক্ত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হন এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবার সচেতনতা কামনা করছি। শিক্ষার প্রসারে সংশ্লিষ্ট বোর্ড কর্মকর্তাদের আরও দায়িত্বশীল এবং স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে সতর্ক ও মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
এই বিভাগের আরও খবর