শিক্ষা খাতে প্রযুক্তি ও চ্যালেঞ্জ
গিয়াস উদ্দিন।।
এ বছর শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৫.১ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। আর এককভাবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১১.৬৯ শতাংশ। তারপরও শিক্ষা ও প্রযুক্তি পরস্পর কতটুকু আপন হতে পেরেছে সেটা বিরাট প্রশ্ন। বাজেটের বরাদ্দ অধিকাংশ বেতনভাতা এবং অবকাঠামোয় ব্যয় করা হয়।
কিন্তু প্রযুক্তিকে অবকাঠামোর আওতায় ধরেও তার কেন দ্রুত উন্নতি করা যায়নি বা হয়নি সেটা আমাদের অজানা। শিক্ষা খাতও যে স্বাস্থ্য খাতের মতো সেকেলে এবং সমস্যায় জর্জরিত, করোনা মহামারিতে সেটা সুস্পষ্ট। গত ১৭ মার্চের পর থেকে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম, পরীক্ষা ইত্যাদি এমনি কবে পুনরায় চালু হবে সেটাও অনিশ্চিত।
আটকে রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার মতো বড় পাবলিক পরীক্ষাও। থমকে আছে ২৮ লাখ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন। এদিকে সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, করোনা মহামারির কারণে ১ কোটি শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে। যা খুবই উদ্বেগের।
গত ২৫ জুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে ইউসিজির ভার্চুয়াল বৈঠকে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে কিছু সমস্যা চিহ্নিত করা হয়, সব শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ নেই তবে ৮০ শতাংশের বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করে। কিন্তু ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থীর তাও নেই।
তাই তৈরি হয়েছে সমান সুযোগ নিশ্চিতের দায়বদ্ধতা। অন্যদিকে বৃদ্ধি করা হয়েছে ইন্টারনেটের দাম। যেখানে সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাই ইন্টারনেট ক্রয়ক্ষমতা অনেকেরই নেই। এছাড়াও সব শিক্ষক অনলাইনে ক্লাস নিতেও অভ্যস্ত নন। এই চতুর্মুখী সংকট আমাদের শিক্ষা খাতকে গ্রাস করেছে। অনলাইনে ক্লাস হলেও পরীক্ষা অনিশ্চিত কারণ সেকেলে মুখস্ত পরীক্ষায় আমরা আটকে আছি। চালু করতে পারিনি ওপেন বুক এক্সামের।
যা আমাদের দিনে দিনে পশ্চাৎপদ করছে।আমাদের শিক্ষা খাতে প্রযুক্তি বহুলাংশে অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া, পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ায় সীমাবদ্ধ। মাল্টিমিডিয়া ক্লাস সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কম্পিউটার বিভাগ, আইটি বিভাগসমূহ ব্যতীত অন্য বিভাগ/অনুষদে অফিসিয়াল কার্যক্রম ছাড়া কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই নগণ্য। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদগুলোর অবস্থা আরো নাজুক।
বিভাগগুলোতে নেই গুগল ক্লাসরুমের ব্যবস্থা কিংবা অধিকাংশ বিভাগ ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইল আইডিরও জোগান দিতে পারেনি।
সেন্ট্রাল লাইব্রেরি কিংবা সেমিনার লাইব্রেরি আছে বটে তবে ই-লাইব্রেরি, ই-বুক এসবের ধারেকাছেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নেই। তাহলে শুধু রংচঙে বিশাল বহুতল ভবন নির্মাণ-ই অবকাঠামো উন্নয়ন? এ ধরনের উন্নয়ন আমরা চাই না।
অনলাইন ক্লাস চাই না চাই অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। ধীরে ধীরে আমরা প্রবেশ করছি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে। যেখানে সবকিছু প্রযুক্তিনির্ভর হবে। ঢাল তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কতটুকু এই প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকবে কিংবা কীভাবে জাতির উৎকর্ষ সাধিত হবে এসব নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তাই যুগোপযোগী শিক্ষা আমাদের অধিকার এবং দাবি।
শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষবার্তা/এসজেড