শিক্ষা কারিকুলাম বিরোধী অপপ্রচার রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান
ঢাকাঃ শিক্ষা কারিকুলাম বিরোধী অপপ্রচার রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, এবারের পাঠ্যপুস্তকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল নাগরিকের পরিচিতি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, দেশপ্রেমসহ সকল যোগ্যতার সন্নিবেশ ঘটেছে, যা শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী, সংবেদনশীল, মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমতার মূল্যবোধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বুধবার রাজধানীর আজিমুর রহমান মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও কনর্সানড উইমেন ফর ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত ‘দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম বাংলাদেশ: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক এসব কথা বলেন তারা। খবর বিজ্ঞপ্তির।
বিএনপিএস সভাপতি শ্যামলী নাসরীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সঞ্চালনায় বৈঠকে বক্তৃতা করেন শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল, সিএফডব্লিউডি’র নির্বাহী পরিচালক লাডলী কে ফয়েজ, স্বাধীনতা শিক্ষক ফোরামের সভাপতি প্রধান শিক্ষক মেহেরুন্নেছা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, ইউএনএফপিএ’র জাতীয় কর্মসূচি কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মনির হোসেন, রত্নগর্ভা ফরিদা জামান স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ফেরদৌসি বেগম, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিক আহসান, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান প্রমুখ।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, বর্তমান শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিক্ষাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যা আগের শিক্ষাক্রমে ছিল না। এখনকার শিক্ষাক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা স্বানন্দে গ্রহণ করেছে, আমাদের সময়ে কখনও এতটা আনন্দের ছিল না। অভিভাবকদের মধ্যে মুখস্থ করার শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বেশী, যা শিক্ষার লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে।
যেখানে শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে, সেখানে অন্যকিছু না ভাবলেও চলবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া জরুরি, এজন্য গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে।
লাডলী কে ফায়েজ বলেন, এই শিক্ষাক্রম প্রণয়নে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ শিক্ষক, গবেষকদেরও যুক্ত করা হয়েছে। সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন এই পদ্ধতির সাথে সবাইকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে, সেটি না হলে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়বে।
ড. মনির হোসেন বলেন, ইউএনএফপিএ শিক্ষাক্রমকে যুগোপযোগী করে তোলার জন্য সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বর্তমান শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমন কিছু বাধাও আছে, সেগুলো সংশোধনের সুযোগও আছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়াটা যেমন জরুরি তেমনি শিক্ষকদের বা প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সমস্যাগুলোও বিবেচনায় দরকার।
অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, এটাই প্রথম শিক্ষাক্রম, যা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নিজ অর্থে, নিজেদের গবেষক ও তদারকিতে প্রণয়ন হয়েছে। এই শিক্ষাক্রমে মুখস্থ ও পরীক্ষা নির্ভরতা কমানো হয়েছে।
সামগ্রিক পরিবর্তন প্রয়োজন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, সেটি না হলে আমরা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বো।
অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান অনেক, বিশাল একটা পরিবার হচ্ছে শিক্ষা পরিবার, এই পরিবারের সবাই যদি একযোগে কথা বলে তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে প্রথমদিকে অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারনা ছিল, এখন সেটি দূর হচ্ছে। শিক্ষাক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই শিক্ষাক্রম বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যা বন্ধ হওয়া দরকার। অভিভাবকসহ সকলের মনে রাখা দরকার ব্যাপক ভিত্তিক গবেষণা ও পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে এই শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
গোলটেবিল অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন সরকারী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক ড. রনজিৎ পোদ্দার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রীতম জাকির, অভিভাবক সানজিদা সুলতানা প্রমুখ।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়