শিক্ষা উপমন্ত্রীর বছরে আয় ৭৯ লাখ টাকা, তথ্যমন্ত্রীর ৪ লাখ
চট্টগ্রামঃ হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বছরে আয় করেন ৭৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা, ড. হাছান মাহমুদ ৪ লাখ টাকা, আর ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বছরে আয় ৭৪ লাখ টাকা। নিজের নামে নগদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা সবচেয়ে বেশি ভূমিমন্ত্রীর। তাঁর রয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শিক্ষা উপমন্ত্রীর ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৯ লাখ টাকা, তথ্যমন্ত্রীর রয়েছে ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংক ঋণের দিক থেকেও এগিয়ে ভূমিমন্ত্রী। বিভিন্ন ব্যাংকে তাঁর ঋণ ৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রীর ঋণ ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং শিক্ষা উপমন্ত্রীর ঋণ ৩ কোটি ৬৫ হাজার টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের এই তিন নেতা ইসিতে যে হলফনামা দাখিল করেন তাতে দেখা যায়, ওই সময় ভূমিমন্ত্রীর বছরে আয় ছিল ৪৯ লাখ টাকা এবং শিক্ষা উপমন্ত্রীর ৫০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর তথ্যমন্ত্রীর তখন আয় ছিল ২৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এই হিসাবে গত পাঁচ বছরে আয় কমেছে তথ্যমন্ত্রীর। কারণ, এবারে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪ লাখ টাকা।
গতবারের হলফনামায় ভূমিমন্ত্রী তাঁর নিজের নামে নগদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা দেখান ১৮ লাখ ৭৩ হাজার, এবার দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই হিসাবে পাঁচ বছরে তাঁর জমা থাকা টাকা বেড়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখ। একই সময়ে শিক্ষা উপমন্ত্রীরও ব্যাংকে জমা টাকা বেড়েছে। গতবার ব্যাংকে ৩০ লাখ টাকা জমা দেখালেও এবার তিনি দেখিয়েছেন ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। এদিকে পাঁচ বছরে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এই খাতে তেমন পরিবর্তন নেই। গতবার তিনি নগদ ও ব্যাংকে জমা দেখান ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর এবারে দেখিয়েছেন ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
তথ্যমন্ত্রীর নগদ রয়েছে ৫ লাখ টাকা
ইসিতে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তথ্যমন্ত্রীর নগদ আছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময়ও হলফনামায় নগদ ৫ লাখ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। কৃষি খাত থেকে বছরে তাঁর আয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি-দোকান-অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ১ লাখ ৪৭ হাজার, ব্যাংক ও অন্যান্য খাত থেকে সম্মানী পান ১ লাখ ২২ হাজার ২৬৩ টাকা। সব মিলিয়ে বছরে তাঁর আয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা হলফনামায় উল্লেখ করেননি তিনি। হলফনামার চাকরি থেকে আয়-সংশ্লিষ্ট কলামে লেখা রয়েছে, ‘মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতাদি ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ রয়েছে।’ ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রীর জমা আছে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, যা গতবার এটি ছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিভিন্ন কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার আছে ৭ লাখ ১২ হাজার ২৫০ টাকার। বর্তমানে তাঁর ঋণ রয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা আগে সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ১ কোটি ২১ লাখ টাকা।
চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার খুলশী মৌজায় ড. হাছান মাহমুদের ৬ কাঠা জমি রয়েছে, যার বাজারমূল্য ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া রাজধানীর পূর্বাচলে তাঁর ৭ দশমিক ৫ কাঠা জমি রয়েছে, যা তিনি ২০০১ সালে প্রবাসী বাংলাদেশি কোটায় আবেদন করে ২০০৭ সালে বরাদ্দ পান। পৈতৃক সূত্রে চট্টগ্রামের বাকলিয়া মৌজায় তিনি ২ কাঠা জমির ৪ ভাগের ১ অংশ পেয়েছেন, যেটি দালান নির্মাণের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি ৫ দশমিক ৬ কাঠা জমির ওপর একটি দালান দানপত্র সূত্রে পেয়েছেন। তাঁর নামে ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা দামের একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে নৌকার প্রার্থী হতে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
২৫ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে ভূমিমন্ত্রীর
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ প্রার্থী হচ্ছেন চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে। হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর বার্ষিক আয় ৭৪ লাখ ১২ হাজার ৯৭ টাকা। এর মধ্যে তিনি কৃষি খাত থেকে আয় করেন ৮৩ হাজার টাকা, বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান বা অন্য ভাড়া থেকে পান ৫৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৯ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ টাকা, চাকরি থেকে ১২ লাখ ৬০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫০ হাজার ৪১৮ টাকা। গত সংসদ নির্বাচনের সময় নানা খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪৯ লাখ ১ হাজার টাকা। বর্তমানে ভূমিমন্ত্রীর হাতে নগদ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা মিলিয়ে রয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৭২ হাজার ২৩৫ টাকা, পাঁচ বছর আগে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় যা ছিল ১৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪১৭ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানিতে তাঁর শেয়ার রয়েছে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ টাকার। নিজের নামে ভূমিমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার। এ ছাড়া তাঁর কৃষিজমি রয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৯০৬ টাকা এবং অকৃষি জমি ১০ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার ৪ টাকার। সব মিলিয়ে তাঁর সম্পত্তি রয়েছে ২৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের। সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ঋণ রয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা, যা গত সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ৮ কোটি ৩৭ হাজার টাকা।
নওফেলের বছরে আয় ৭৯ লাখ টাকা
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের বছরে আয় ৭৯ লাখ ২৮ হাজার ৭২৮ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫০ টাকা ও পেশা সম্মানী হিসাবে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৮ টাকা আয় করেন তিনি। এ ছাড়া চাকরি থেকে বছরে ১০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও অন্যান্য খাতে ১৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৭০ টাকা আয় তাঁর। গত সংসদ নির্বাচনের সময় বছরে তাঁর আয় ছিল ৫০ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ টাকা। ওই সময় নওফেল ও তাঁর স্ত্রীর কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। এবার তাদের ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা স্থাবর সম্পত্তি হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে নওফেলের নামে ৪ লাখ টাকার কৃষিজমি, ১ কোটি টাকার দালানকোঠা এবং স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ টাকার দালান থাকার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিজের নামে বর্তমানে নগদ আছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৯৪ টাকা, যা গতবারের হলফনামায় ছিল ৩০ লাখ টাকা। গতবার তিনি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের ঘরে ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬৮২ টাকা দেখালেও এবারের হলফনামায় সেখানে কিছুই উল্লেখ করেননি। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার দেখিয়েছেন ১০ লাখ টাকার। তাঁর পোস্টাল সেভিংস রয়েছে ৬ কোটি ২ লাখ ১৭ হাজার ৪১২ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংকে বর্তমানে তাঁর ঋণ ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, যা পাঁচ বছর আগে ছিল ৩২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এই হিসাবে নওফেলের ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সমকাল
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়