শিক্ষায় জাতীয়করণ কতদূর!
আজকের এই মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছে বিবর্তনে এবং সমস্যা ও সমাধান এই দুটি চিরাচরিত চর্চাকে ঘিরে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই সমস্যা যেমন রয়েছে সমাধানও সেই আলোকেই গড়ে উঠেছে।
অথচ শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সমস্যা বেড়েই চলেছে যেখানে সমাধান ভাবনা সুদূর পরাহত। মানবকূলে যেখানে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞান ও গবেষণালব্ধ সৃজনশীলতা প্রয়োগ জরুরী সেখানে আজ খামখেয়ালীপনা স্পষ্ট। সমস্যা আছে সমাধান নেই। আর সেই অবহেলিত ও স্পর্শকাতর বিষয়টি হল শিক্ষা।
জাতির পিতার ৪০ বৎসর আগের প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের সূচনা ও বাস্তবায়নের দর্শন আজও জাতির কর্ণধাররা বুঝতে বড় অক্ষম।
স্বাধীনতার ৫০ বৎসরপূর্তি ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী আসন্ন। এতকাল পেরিয়ে এসেও কি রাষ্ট্রের সময় হয়নি অন্তত সারা বাংলায় ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা জাতীয়করণের চিন্তা করতে? যদিও দেশ মধ্যম আয়ের দ্বারপ্রান্তে।
তবুও কিন্তু সাম্প্রতিককালে উপজেলাকেন্দ্রিক বিছিন্ন জাতীয়করণের ঘোষণায় শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়াস লক্ষণীয়। যদিও বৈষম্য তথা অস্থিরতার অভিযোগ বিছিন্ন জাতীয়করণে খুবই স্পষ্ট।
জাতির কারিগর শিক্ষককে ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দিয়ে ১০% কর্তন রেখে শত শত মাইল দূরে শিক্ষকতা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বড়ই বেমানান।
কোন ধরনের যুক্তি, সংলাপ, পূর্ব সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে চাপিয়ে দেওয়া কর্তন শিক্ষকদের সুপ্ত মনোকষ্টের অগ্নিশিখায় কেরোসিন ঢেলে দেওয়ার সামিল।
শত মাইল দূরে থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকরা বদলির দাবি জানালেও কর্ণপাতে রাজি নই শিক্ষার কর্তারা। অথচ এমপিও নীতিমালায় বদলির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও আদালতের দ্বারস্থ হয়ে এর বাস্তবতার সিদ্ধান্ত আনতে হয়। এ যেন অভিভাবক শুন্য এক পরিবার।
এমনটা হওয়ার জন্য তো সরকার প্রধান দিন রাত দেশ বিনির্মাণে পরিশ্রম করছেন না। । জাতির জনকও এ স্বাধীনতা চাননি। যে স্বাধীনতায় মৌলিকতার শিক্ষাকে জাতিয়করণে আন্দোলনের প্রয়োজন হয়।
উচ্চস্তর স্কেলের ঘোরপাকে শিক্ষকদেরকে উদ্ধিগ্ন করে শিক্ষায় অযাচিত সমস্যা তৈরি নিশ্চয় কোন শুভ লক্ষণ নয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সকলেই জাতি গঠন ও শিক্ষায় শিক্ষকদের ভুমিকার স্বীকৃতি ও প্রশংসা করে থাকলেও কখনও শিক্ষকদের অর্থনৈতিক দৈন্যতার বিষয়টি সামনে আনেননি।
আনুমানিক ৪০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দিয়ে ১৫ কোটি মানুষের বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষার মানসম্মত প্রসার সময়ের বাস্তবতার সাথে খেয়ালি ছাড়া আর কি?
মানবিক ও প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়তে মাধ্যমিক শিক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখানে জাতীয়করণ সুদূর পরাহত।
আক্ষেপ জাতির যারাই শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বে এতকাল পেরিয়েছে জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষার ভবিষ্যৎ ভাবনা তাদের কতটুকু ছিল প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
সময় আর কত বইলে মাধ্যমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করে খেটে খাওয়া ৮০% কৃষক সন্তানদের গ্রামে শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা হবে?
জেলায় ছিল, উপজেলায় হল এবার নিগৃহীত বঞ্চিত মেহনতী মানুষের আবাসস্থল সেই গ্রামে গঞ্জের ইউনিয়নে জাতীয়করণের দাবী কি খুবই অযৌক্তিক?
যদি বিষয়টি যৌক্তিক হয় তাহলে অচিরেই ইউনিয়ন ভিত্তিক জাতীয়করণের কাঠামো তৈরি করা জরুরি।
কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা ছিল ' শিক্ষায় কোন খরচ লাগবে না।' এ অনন্য উক্তিটি উপস্থাপনে যোগ্য মাধ্যম থাকলে হয়ত দেশ মাতৃকার আশ্রয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয়করণে সময় নিতেন না।
তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টিই জাতির কাম্য।
লেখকঃ শাহআলম সরকার