শিক্ষায় আবারো ছন্দ পতন
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
করোনার পর এবার বন্যায় বড় ধরনের ছন্দ পতন হচ্ছে শিক্ষা খাতে। সিলেট বিভাগের পর দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অনেক জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আবার বন্যপ্রবণ এলাকায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে এসব এলাকায় শিক্ষাকার্যক্রম এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। অন্য দিকে ইতোমধ্যে সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রোববার থেকে এই পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল।
একই সাথে আগামী মাস থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এইচএসসি পরীক্ষাও পেছানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। সর্বশেষ গতকাল রোববার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে জানানো হয়েছে, এখন থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বন্যাপ্রবণ এলাকায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। ডিপিই সূত্র জানায়, দেশের জলমগ্ন সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণী পাঠদান স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গতকাল রোববার ডিপিইর মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় এ তথ্য জানা যায়। নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন হয়ে আছে। বাস্তবতার নিরিখে এসব জলমগ্ন বিদ্যালয়ে শ্রেণী পাঠদানকার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব নয়।
অন্য দিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান ২০২০ সালের বিএড অনার্স প্রথমবর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার এবং বিএড অনার্স দ্বিতীয়বর্ষ চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্থগিত এই দুই পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছর ধরেই এপ্রিল মাসে শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষা। আর মে মাসে শুরু হতো এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই প্রকাশিত হতো ফলাফল। এই ধারায় বিগত বছরগুলোতে শিক্ষাকার্যক্রমে একটি নিয়মিত রুটিনও চালু হয়েছিল। কিন্তু ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ছেদ পড়ে সামগ্রিক শিক্ষাকার্যক্রমে।
করোনার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় শিক্ষাপুঞ্জি। এর মধ্যে এক বছর বাতিল করা হয় এসএসসি পরীক্ষা। অটোপাস দিয়ে সব শিক্ষার্থীকে অটোপ্রমোশন দিয়ে ওপরের ক্লাসে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরের বছরে এসএসসি ও এইচএসসিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এবং অর্ধেক সময়ের পরীক্ষা নেয়া হয়। চলতি বছর থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও আগামী বছরগুলোতে শিক্ষাকার্যক্রম নতুনভাবে শুরু করার পরিকল্পনা ছিল সরকারের।
একই সাথে ২০২৩ সাল থেকে নতুন কারিকুলাম এবং পরিবর্তিত কাঠামোতে ফেরারও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এবারের আকস্মিক বন্যায় সব পরিকল্পনার লাগাম টেনে ধরতে হয়েছে। একদিকে যেমন এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে একই সাথে আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষাকার্যক্রমে নিশ্চিতভাবেই ছেদ পড়বে। আর বন্ধের এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেও লম্বা সময়ের প্রয়োজন হবে।
ধারণা করা হচ্ছে শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নয় বন্যা এলাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্যার মধ্যে খোলা রাখার কোনো সুযোগ থাকবে না। ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার ২০ অধিক জেলায় বন্যা হানা দিলে এবং এসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলে কার্যতই অন্যান্য জেলাতেও শিক্ষাকার্যক্রমে বিরতি চলে আসবে। আর এই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে চলতি বছরের শেষদিকে বার্ষিক পরীক্ষা এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে যে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় এই বছরের এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে যাবে কি না?
এ বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবারো আমরা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার নতুন সময়সূচি প্রকাশ করব। আর যদি দেখা যায়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়ে গেছে, তাহলে ঈদের আগেও শুরু করতে পারি। বিষয়টি নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর। আর যদি বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরো সময় লাগে কিংবা নতুন করে আরো জেলা প্লাবিত হয় তাহলে তো এটা নিশ্চিত যে সামগ্রিক শিক্ষাকার্যক্রমের ওপরেই এর প্রভাব পড়বে।