আমার চোখে দেখা একটি অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম আমাকে আপ্লুত করেছে। সংগঠনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর শাহজাহানপুর ইউনিয়নে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংগঠনটির নাম ‘শাহজাহানপুর ছাত্র ঐক্য পরিষদ’। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০১১ সালে। তখন ইউনিয়নটিতে শিক্ষার হার ছিল একদম নিম্নপর্যায়ে। কয়েক জন শিক্ষার্থীর হাত ধরে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
‘শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন’ এই স্নোগানকে সামনে রেখে, তারা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে আজও অবধি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন সে সময়ের রাবির মেধাবী ছাত্র ইলিয়াস হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মেধাবী ছাত্র মোফাজ্জল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক বুটেক্সের মেধাবী ছাত্র মিসবাহ উল হক, উপদেষ্টা মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ছিলেন ঢাবির মেধাবী শিক্ষার্থীর সারোয়ার হোসেন। তাদের হাতে গড়া সংগঠনটি যেমন শিক্ষার হার বৃদ্ধি করছে, তেমন উচ্চশিক্ষার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্র তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে।
পিছিয়ে পড়া ইউনিয়নটি আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ‘ছাত্র ঐক্য পরিষদের’ প্রচেষ্টায় বর্তমানে ইউনিয়নটিতে বিভিন্ন মেডিক্যাল, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অন্তত ৫০জন ছাত্র অধ্যয়নরত আছেন। শিক্ষার উন্নতির পাশাপাশি সমাজও অনেকটা উন্নতি লাভ করেছে। ইউনিয়নটিতে শিক্ষানুরাগী মানুষ তৈরিতে এ সংগঠনের অবদান অনস্বীকার্য। বলাবাহুল্য, বর্তমানে ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে ঘরে অন্তত একজন হলেও ছাত্র খুঁজে পাওয়া যায়।
যা সে সময়ে একটা ঘরে নয়, একটা গ্রামেই একজন ছাত্র খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। হুমায়ন আজাদের ভাষায়, ‘কোনো দেশের লাঙলের রূপ দেখেই বোঝা যায় ঐ দেশের মেয়েরা কেমন নাচে, কবিরা কেমন কবিতা লেখেন, বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করেন, আর রাজনীতিকেরা কতোটা চুরি করে।’ সুতরাং কোনো সমাজের মূল চালিকাশক্তি যদি নেতৃত্বদানে যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে এবং কোন সংঠনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় (লাঙ্গলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়) তাহলে সে সমাজ ব্যবস্হার রূপরেখাও মানসম্মত হবে বলে আশা করা যায়।
ছাত্রদের নেতৃত্বদানে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলার ভূমিকা ছাত্রবান্ধব ছাত্র সংগঠন ও সুশৃঙ্খল ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমেই সম্ভব। সমাজ পরিবর্তনে বাহন তৈরিতে, শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে, নেতৃত্বদানে যুগোপযোগী সৎ ও আদর্শবান ছাত্র তৈরিতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ‘শাহজাহানপুর ছাত্র ঐক্য পরিষদ’।
এজন্য, শেরিল স্যান্ডবার্গ (চিফ অপারেশন অফিসার)-এর কথায় বলতে হয়, ‘নেতৃত্ব মানে তোমার উপস্হিতিতে অন্যরা উন্নতি করবে, এবং তোমার অনুপস্হিতিতেও সেই উন্নতি বজায় থাকবে।’ সুতরাং ‘ছাত্র ঐক্য পরিষদ’ যতদিন থাকবে নেতৃত্ব পরিবর্তন হলেও তাদের উন্নতি বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। সমাজের প্রতিটি স্তরে যদি সৎ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্রসমাজ ভবিষ্যতে নেতৃত্বে আসে, সমাজের প্রতিটি স্তর স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত হবে, যা সমাজ পরিবর্তনে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো যদি শিক্ষার জন্য, সমাজ পরিবর্তনের জন্য, নেতৃত্বদানে যোগ্যতাসম্পন্ন, সৎ ও আদর্শবান কর্মী তৈরিতে কাজ করে তাহলে আমাদের দেশটি সোনার দেশে পরিণত হবে, বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। কেননা, একটি ছাত্রবান্ধব সংগঠন, একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন সমাজ পরিবর্তনের বাহন।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া