শিক্ষার নামে সরকারি প্রকল্পের টাকা হরিলুট
বাগেরহাটঃ জেলার মোংলায় ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ কার্যক্রম কাগজেকলমে থাকলেও বাস্তবে তার চিত্র ভিন্ন। শিক্ষক আর সুপারভাইজার থাকলেও তদারকির অভাবে তার নেই কোন কার্যক্রম। স্কুলেও নেই ছাত্র-ছাত্রী। দুটি এনজিও সংস্থা প্রকল্প দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।
জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুারো অফিসের দেয়া তথ্য মতে, পথ শিশু ও প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পড়া ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম ‘আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।
২০২০ সালের জানুয়ারীতে মোংলা উপজেলার পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে ২ হাজার ১০০ জন ঝরে পড়া শিশুকে শিক্ষা দেয়ার জন্য এ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছিল। সরকারের গৃহীত ৪২ মাসের এ প্রকল্পের জন্য মোংলায় ‘নীড় সেবা সংস্থা’ ও ‘সিডোপ’ নামের দুইটি এনজিওর মাধ্যমে ৩৫টি করে ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়।
প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একজন শিক্ষক ও ৭০টি শিক্ষাকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১০ জন সুপারভাইজারও নিয়োগ দেয়া হয়।
এসব শিক্ষকের জন্য প্রতি মাসে ৫ হাজার ও সুপারভাইজারের জন্য ১৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে শর্তে নিয়োগ পান তারা। কিন্ত এ দুই এনজিওর কর্তা ব্যাক্তিরা শিশুদের শিক্ষার নাম করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। আর সুপারভাইজার যারা রয়েছেন তারা শিক্ষাকেন্দ্র তদারকির কথা থাকলেও তা না করে ঘুরে বেড়চ্ছেন শহরের অলিতে গলিতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বসতবাড়িতে,পরিত্যক্ত দোকানে অথবা গোয়াল ঘরের পাশে খোলা হয়েছে শিক্ষাকেন্দ্র। আবার অনেক কেন্দ্রের শুধু নামসর্বস্ব সাইনবোর্ড থাকলেও নেই কোন ছাত্র/ছাত্রী ও শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষক ও সুপারভাইজার মিলে এলাকা থেকে খুঁজে নিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০ জন ছাত্র/ছাত্রী রাখার কথা থাকলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ২/৩ জন দেখা গেছে। আবার অনেক কেন্দ্র তালাবদ্ধ রয়েছে বহুদিন থেকেই।
এ ব্যাপারে নীড় সেবা সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার লিপি ধুনী জানান, সরকারের কাছ থেকে এখনও অর্থ ছাড় না পাওয়ায় শিক্ষক, সুপারভাইজারদের বেতন, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি দিতে না পারায় কার্যক্রম একটু ঝিমিয়ে পড়েছে। আমরা আশা করছি এই মাসের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হবে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপংকর দাশ বলেন, নীড় ও সিডোপ এনজিও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করছে কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে খোঁজ নেয়া হচ্ছে, সংস্থার বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুারোর জেলা সহকারী পরিচালক হিরামন কুমার বিশ্বাস বলেন, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২১/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়