শিক্ষার্থী ছাড়াই চলছে মাদ্রাসা
নিউজ ডেস্ক।।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নেই কোনো শিক্ষার্থী। চতুর্থ শ্রেণিতে চারজন আর পঞ্চম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। অন্যান্য শ্রেণির খাতায় থাকলেও উপস্থিত পাওয়া গেছে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী। ইবতেদায়ি শাখার একটি কক্ষ বাদে বাকি অংশ ফাঁকা। এসব কক্ষে বেঞ্চ পর্যন্ত নেই। এতে ইবতেদায়ি শাখার শিক্ষকরা বসে বসে নিচ্ছেন সরকারি বেতন। গত বৃহস্পতিবার এমন চিত্র দেখা গেছে বন্দগোয়ালিয়া আল মাআরিফুল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসায়। প্রতিষ্ঠানটির সুপারের বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ।
মুক্তাগাছা উপজেলার খেরুয়াজানি ইউনিয়নের বন্দগোয়ালিয়া গ্রামে আল মাআরিফুল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসাটি ১৯৮১ সালে স্থাপিত হয়। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯৫ সালে এমপিওভুক্ত হয় মাদ্রাসাটি। ১৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়ে চলছে পাঠদান। শিক্ষকদের দাবি, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৮৫।
গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির কক্ষে নেই কোনো শিক্ষার্থী। একটি কক্ষের এক পাশের বেঞ্চে বসে আছে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী, অন্য পাশের বেঞ্চে চতুর্থ শ্রেণির চার শিক্ষার্থী। একজন নারী শিক্ষক দুটি শ্রেণির পাঠদান করছেন। ইবতেদায়ি শাখা অংশের চারটি শ্রেণিকক্ষ একদম ফাঁকা। এগুলোতে বেঞ্চ পর্যন্ত নেই। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৬২ শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া গেছে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিহাদ জানায়, সে একাই মাদ্রাসায় আসে। সে যেদিন না আসে, সেদিন পঞ্চম শ্রেণির কক্ষ ফাঁকা থাকে। তাকে একাই পাঠদান করেন শিক্ষকরা।
ইবতেদায়ি শাখার প্রধান আব্দুর রহমানকে পাওয়া যায়নি মাদ্রাসায়। অন্য শিক্ষকরা জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। কিন্তু সহকারী সুপার এহতেশামুল হক তাঁর পক্ষে ছুটির কাগজ দেখাতে পারেননি। মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল ইসলামকেও মাদ্রাসায় পাওয়া যায়নি। সহকারী সুপার এহতেশামুল হক বলেন, তিনি দাপ্তরিক কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেছেন। তবে সেখানে খোঁজ নিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
সুপার সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। মাদ্রাসার জমি গোপনে বিক্রি, পুকুর ইজারা দিয়ে টাকা আত্মসাৎ, সরকার প্রদত্ত টিউশন ফি স্টাফদের না জানিয়ে আত্মসাৎসহ ৯টি বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। বিষয়টি তদন্তাধীন।
এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেকের ভাষ্য, অব্যবস্থাপনা ও লেখাপড়ার মান ভালো না থাকায় সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাতে চায় না এলাকাবাসী। সুপারের দুর্নীতির কারণেই মাদ্রাসার মান ক্ষুণ্ন হচ্ছে, কমছে শিক্ষার্থী।
দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আনোয়ার হোসেন বলেন, লেখাপড়ার মান অনেক খারাপ। শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছেমতো মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া করেন। সুপারের অনিয়মের কারণে মাদ্রাসার এমন দশা।
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় মাদ্রাসার সুপার সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, করোনার পর এলাকায় অসংখ্য কওমি মাদ্রাসা হওয়ায় ইবতেদায়ি শাখায় শিক্ষার্থী আসে না। অনেক চেষ্টা করেও শিক্ষার্থী জোগাড় করতে পারেননি তারা। তার অভিযোগ, এলাকায় কিছু লোক তাদের স্বার্থ উদ্ধারে তার পেছনে লেগেছেন। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে হয়রানি করছেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন বলেন, এখন কওমি মাদ্রাসার ছড়াছড়ি। এ কারণে শুধু দাখিল মাদ্রাসায় নয়, স্কুলগুলোতেও শিক্ষার্থী কমে গেছে। সুপারের অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষা তার ভাষ্য, এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে।সুত্র সমকাল