শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে, একমাত্র শিক্ষক সমন্বয় সভায়
সুনামগঞ্জঃ তাহিরপুরের মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৫ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক মাত্র একজন। বুধবার তাঁকে বাধ্যগতভাবে উপস্থিত থাকতে হয় মাসিক সমন্বয় সভায়। এতে দিনভর বন্ধ ছিল বিদ্যালয়ের পাঠদান।
জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর তাহিরপুর সফর সামনে রেখে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে মাসিক ওই সমন্বয় সভাটি ৬ মার্চ আয়োজন করা হয়।
গতকাল বুধবার তাহিরপুর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার ১৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে মাসিক সমন্বয় সভাতে উপস্থিত থাকতে হয়। নিয়ম মেনে সেখানে যেতে হয় উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র সহকারী শিক্ষক (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) সানজু মিয়াকেও। এই সভাটি প্রতি ইংরেজি মাসের ১০ তারিখ আয়োজন করা হয়। তবে তাহিরপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলীর সফর সামনে রেখে তা এগিয়ে আনা হয় ৬ মার্চ।
কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না করেই একমাত্র শিক্ষককে সভায় ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং দিনভর বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে না চাইলেও অনেক অভিভাবকই তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন এই প্রতিনিধির কাছে।
জিলানী তালুকদার নামে স্থানীয় এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন শিক্ষক নেই। পাঠদান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা হইহুল্লোড় করছে।
১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত অনুমোদিত পাঁচ শিক্ষকের এ বিদ্যালয়ে কখনও পূরণ হয়নি এসব শিক্ষকের পদ। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদটি ২০১৫ সাল থেকে শূন্য। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সর্বমোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২১৫। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অবহিত করলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস পার্শ্ববর্তী তরং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকাকে গত ১ জানুয়ারি থেকে মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি ওই শিক্ষিকাকেও প্রেষণে নিয়োগের আদেশ বাতিল করেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
শিক্ষক অভিভাবক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন জানান, হাওরবাসী এমনিতেই অবহেলিত। তারপর বিদ্যালয়টিতে অনুমোদিত পাঁচটি পদ রয়েছে। কখনও পাঁচ শিক্ষকের পদ পূরণ হওয়া তো দূরে থাক, একসঙ্গে তিনজন শিক্ষকও পাওয়া যায়নি।
মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া জানান, ২১৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানো খুবই কষ্টের কাজ। তাদের পাঠদান সামাল দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করতে হয় তাকে। বুধবার বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী রেখে অনেকটা বাধ্য হয়েই তাঁকে উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাসিক সমন্বয় সভায় হাজির হতে হয়েছে। এতে পাঠদান বন্ধ ছিল বিদ্যালয়ে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের জানান, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষক পোস্টিং দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে কিছুটা সমাধান করা যেত। সম্প্রতি দু’জন শিক্ষক প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দু’জন শিক্ষকের নাম কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো শিক্ষকের নামই বলতে পারেননি।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস জানান, মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুদিনের মধ্যেই দু’জন শিক্ষক প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রীর ওই সফর সামনে রেখে মাসিক সমন্বয় সভার সময় এগিয়ে আনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি রাগান্বিত সুরে জানতে চান, সাংবাদিকদের এত প্রশ্ন কেন? তিনি জানান, কারও নির্দেশনায় নয়, পদাধিকার বলে মাসিক সমন্বয় সভা এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকদের সেখানে উপস্থিত হতে বলা হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৩/২০২৪