শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রুখতে হবে
করোনার প্রাদুর্ভাবে থমকে গেছে পৃথিবী। প্রথম ধাক্কায় এই ভাইরাস পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষকে করেছে ধরাশায়ী। মারা পড়েছে ১৪ লক্ষাধিক মানুষ। অর্থনীতিকে করেছে পঙ্গু। ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। প্রথম ধাক্কা সামলাতে না সামলাতে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ধাক্কায় সংক্রমণ। বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে চার লাখ ৬০ হাজার ৬১৯ জন। মারা গেছে ছয় হাজার ৫৮০ জন। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়েছে। সংক্রমণ বেড়েছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। একই সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় এমন আভাস মিলছে।
মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে শিক্ষার্থীদের পারিবারিক আয় কমে যাওয়ায় মূলত লেখাপড়ায় ছেদ পড়তে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, আয় কমে যাওয়ায় খরচের জোগান দিতে না পেরে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে রাখার ব্যাপারে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি অভাবের তাড়নায় অনেক মা-বাবা পরিণত বয়সের আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দিচ্ছেন মেয়েকে। আবার ছেলে সন্তানের হাত থেকে বই-খাতা নামিয়ে দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন সংসারের।
এসজিডি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরম পরিচালিত এক জরিপে ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে বিপুল সংখ্যক তরুণ-যুবক নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। আর্থিক সংকটে পড়া পরিবারকে সহায়তা করতে এইসব সন্তান পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আয় কমে গেছে ৮০ শতাংশ মানুষের। এছাড়া নারীদের মধ্যে ৮ শতাংশ বিয়ের কারণে পড়াশোনা ছেড়েছে। পরিবারকে সহায়তার জন্য ছেড়েছে ১৩ শতাংশ। পাশাপাশি ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের জরিপের ফলাফলে বলা হয়, জরিপ এলাকায় বাল্যবিয়ে আগের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। ৮৫ শতাংশ বাল্যবিয়ে হয়েছে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে। ৭১ শতাংশ হয়েছে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার এই সংকটকালীন চর কিংবা হাওর অঞ্চলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে আশঙ্কাজনক হারে। গবেষণা বলছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভিভাবকদের মধ্যে একদিকে যেমন সচেতনাতার অভাব অন্যদিকে আর্থিক অসঙ্গতি। করোনাকালের এই দুর্যোগে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা সন্তানদের কাজে পাঠিয়ে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। তাদের মতে, যুব সমাজের একটি অংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন তৎপরতায় সক্রিয় আছে। অপর একটি অংশ রয়েছে বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। কেউ মাদকে যুক্ত, কেউ অবসাদে ভুগছে। আর এই বাস্তবতাই বলে দিচ্ছে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কাই বেশি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, অখণ্ড চিন্তা থেকে সরে এসে বিভাজিতভাবেই যুবাদের দেখতে হবে এবং কীভাবে তাদের সক্রিয় করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।
আমরা মনে করি, এ ভাবনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তাদেরই সামনের কাতারে এগিয়ে এসে এই কঠিন সমস্যার সমাধান দিতে হবে। আমরা এটুকু বলতে পারি, তারা কোনো ইতিবাচক ভূমিকায় এগিয়ে এলে এ দেশের মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।