শিক্ষাবার্তা'য় সংবাদ: শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তদন্ত করল শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ "আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়: জালিয়াতিতে ভরা হিন্দু ধর্ম শিক্ষক শিপ্রার নিয়োগ" শিরোনামে শিক্ষাবার্তা'য় সংবাদ প্রকাশের পর শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (হিন্দু) শিপ্রা রানী রায়ের নিয়োগ জালিয়াতি নিয়ে সরেজমিন তদন্ত করেছেন শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রেজুয়ান আয়নাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্ত করেন। এর আগে রবিবার (১৮) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত পত্রে শিক্ষাবার্তা'য় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ আগামী ১০ (দশ) দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অত্রকার্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য বলা হয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরেজমিনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তে এসে শিক্ষাবার্তা'য় প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের সময় অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক (হিন্দু) শিপ্রা রানী রায় উপস্থিত ছিলেন। এসময় শিপ্রা রানী রায় ২০০৫ সালে যে নিয়োগ পেয়েছেন সে সময়ের বিদ্যালয়টির হাজিরা খাতা দেখতে চান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। ২০০৫ সালে শিপ্রা রাণী রায়ের নিয়োগ দেখানো হলেও হাজিরা খাতায় ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই শিক্ষিকার কোন স্বাক্ষর হাজিরা খাতায় পাওয়া যায়নি।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে হিন্দু ধর্ম শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখানো হলেও ২০১০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যালয়টিতে এমপিওভুক্ত হিন্দু পন্ডিত শিক্ষক ছিলেন শ্রী বিধান চন্দ্র রায়। একজন হিন্দু পন্ডিত শিক্ষক থাকা অবস্থায় কিভাবে শিপ্রা রাণীকে নিয়োগ দেখানো হয়েছে জানতে চাইলে শিপ্রা রাণী রায়ের ঘনিষ্ঠজন একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুজ্জামান শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানান, শ্রী বিধান চন্দ্র রায় হিন্দু পন্ডিত শিক্ষক নন তিনি ছিলেন ইংরেজি শিক্ষক। এরপর শিক্ষা কর্মকর্তা শ্রী বিধান চন্দ্র রায়কে বিদ্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞেস করেন তিনি কি বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। শ্রী বিধান চন্দ্র রায় নিজে এই কর্মকর্তার কাছে স্বীকার করেন তিনি হিন্দু ধর্ম শিক্ষক ছিলেন এবং ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি অবসরে যান। শিক্ষক নুরুজ্জামান শিপ্রা রাণী রায়কে বাঁচাতে গিয়ে তিনি মিথ্যা তথ্য দেন তা প্রমাণিত হয়।
২০০৫ সালে নিয়োগ পেয়ে ২০১৯ সালে পান্ডিত্যের ডিগ্রি নিলেও ২০১০ সালে হিন্দু শিক্ষক হিসেবে কিভাবে এমপিওভুক্ত হন শিপ্রা রানী রায় এই বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় শিক্ষাবার্তা। নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য যোগ্যতা না থাকলে এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। তবে শিপ্রা রানী রায়ের পান্ডিত্যের সনদ না থাকা, স্নাতকে ৩য় বিভাগ থাকা, যে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে তৎকালীন সময়ে তার কোন অস্থিত্ব না থাকা এবং ধর্ম শিক্ষকের প্রাপ্যতা না থাকায় তিনি কোনভাবেই এমপিওভুক্তি হতে পারেন না। এমপিওভুক্তির জন্য তিনি পান্ডিত্যের সনদ জাল করেসহ সমস্ত কাগজ জালিয়াতি করে কিছু অসাধু কর্মকর্তা যোগসাজসে তিনি এমপিওভুক্ত হয়ে আজ পর্যন্ত সরকারের এমপিও অংশের টাকা আত্মসাৎ করছেন।
তদন্ত সূত্র বলছে, শিক্ষিকা শিপ্রাকে শিক্ষা কর্মকর্তা জিজ্ঞেস করেন, ২০১০ সালে কাম্য যোগ্যতা ছাড়া কিভাবে তিনি এমপিওভুক্ত হলেন? এর জবাব দিতে পারেননি তিনি। শিপ্রা বলেন, বিদ্যালয়টির তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। যদি কোন ভূল থাকে সেটা এই প্রধান শিক্ষকের।
তদন্তে উপস্থিত একাধিক সূত্র বলছে, শিক্ষাবার্তা'য় প্রকাশিত সংবাদে নিয়োগ জালিয়াতির যে বিষয়গুলো উঠে আসে তার কোনটিই ভূল প্রমাণ করতে পারেনি শিপ্রা রানী রায়।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, প্রকাশিত সংবাদে যে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছিল তদন্ত কর্মকর্তা তার সত্যতা পেয়েছে। সংবাদের কোন অংশই ভূল কিংবা মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রেজুয়ান শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, সরেজমিন তদন্ত করেছি। নির্দিষ্ট সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৩/০২/২০২৪