শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সভাপতি ক্যান্সারের মতো হুমকি স্বরূপ
মো: দ্বীন ইসলাম হাওলাদার।।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ম্যানেজিং কমিটি/গভার্নিং বডি নামে পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদের সভাপতি মহোদয় থাকেন ঐ পরিষদের সর্বময় কর্তা। সভাপতি মহোদয় সাধারনত: কোনো সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা (ইউএনও/এডিসি/ডিসি) বা কোনো রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যাক্তি হয়ে থাকেন।
তবে রাজনীতিক ব্যাক্তিবর্গের সভাপতিত্বে আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থাকে ক্যান্সারের মতো খেয়ে ফেলছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিকরা সভাপতি হলে, তাদের দলীয় শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানে না এসেই বছরের পর বছর বেতন নিয়ে সরকারের মোটা অংকের টাকা তছরূপ করেন। সভাপতিরা ঐ সকল শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে তাদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীরা সভাপতির মাধ্যমে টেন্ডার সুবিধা নিয়ে অল্প দিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। এ ভাবে সারা দেশে কমপক্ষে ২০% শিক্ষক-কর্মচারী রাজনৈতিক সভাপতিদের মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা নিয়ে থাকেন।
এই রাজনৈতিক সভাপতি মহোদয়েরা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট করেন। স¤প্রতি লক্ষ্য করা যায় এরা ঘঞজঈঅ এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা আদায় করেন। নিয়োগ প্রাপ্তরা টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলে তাদের যোগদানে বাধা প্রদান করেন।
সময় অসময়ে তারা রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে তাদের রাজনৈতিক চৎড়ঢ়ধমধহফধ ছড়িয়ে দেন। ফলে শ্রেনী কার্যক্রমের অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়। অন্যদিকে কমিটির মিটিং থাকলে তাও তারা তাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বা বাসায় যেতে বলেন। আবার যখন প্রতিষ্ঠানে মিটিং এর জন্য আসেন তখন অনেক নেতা-কর্মী নিয়ে আসেন। যার ফলে আপ্যায়নে যেমন অর্থ ব্যয় হয়; তেমনি শ্রেনী কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।
এমনকি সভাপতির আগমনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে রাস্তার দু’ধারে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাড়িয়ে থাকতে হয়। আবার রাজনৈতিক কোন অনুষ্ঠান বা তার ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানেও লোক সমাগম বেশি দেখাতে ও তার নিজস্ব ভাবমূর্তি বাড়াতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাস্তার দু’ধারে বা কোন খোলা মাঠে দাড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেন।
প্রতিষ্ঠানে সাধারন কোন অনুষ্ঠানে (পরীক্ষার্থীদের বিদায়/ ক্রীড়া প্রতিযোগীত/ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী ইত্যাদি) তিনি তার ভাবমূর্তি বাড়াতে এমপি/মন্ত্রী সহ প্রভাবশালী নেতাদেরকে আহবান করেন। ফলে এক দিকে যেমন আপ্যায়নের ও তাদের উপঢৌকন দিতে প্রতিষ্ঠানের বিশাল অংকের টাকা খরচ হয় তেমনি কয়েক সপ্তাহ ধরে শ্রেনী কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজ করতে হয়। এমনকি শিক্ষকদেরকে বড় অংকের চাঁদা দিতেও বাধ্য করা হয়। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও সভাপতি মহোদয়েরা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
এছাড়াও দেখা যায়, অন্য কোন অফিসের পিয়ন/মালী/ করনিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটির সদস্য হলে তারা না বুঝে; না শুনে শিক্ষকদের সাথে অসদারচন করেন। যা অনেকাংশে অসহনীয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে স্নাতক পাশের বিধান থাকা দরকার এবং শিক্ষকদের সমপর্যায়ের কর্মকর্তা হওয়া দরকার। রাজনৈতিক সভাপতিদের কারনে অশিক্ষিত সদস্যরাও শিক্ষকদের সাথে অন্যায় আচরনের সুযোগ পেয়ে থাকেন।
এক্ষেত্রে কোন সরকারি কর্মকর্তা (ইউএনও/এডিসি/ডিসি) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকে। সকল শিক্ষক-কর্মচারী প্রতিষ্ঠান মুখী থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি দিন দিন উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়। এ বিষয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরকে সভাপতির পদ থেকে বাদ দিয়ে কোন সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাকে সভাপতি নির্বাচন করা উচিৎ।
লেখক-
প্রভাষক
দুমকি ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা
দুমকি, পটুয়াখালী।