শিক্ষাঙ্গণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করেছে গাংনীর জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়
রফিকুল আলম বকুল, মেহেরপুরঃ
মেহেরপুরের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে অবদান রেখেছে তার মধ্যে জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় অন্যতম। নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরা এ বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আস্থার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তেমনি প্রশাসনিকভাবে নজর কেড়েছে।
১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া - মেহেরপুর মহাসড়কের জোড়পুকুরিয়া গ্রামে চার একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যালয়টিতে রয়েছে ছয়শ’ শিক্ষার্থী। ২২জন এমপিওভুক্ত ও ১৫ জন নন-এমপিও ভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী দিয়ে চলছে এ প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষাদানের জন্য যেমন রয়েছে অভিজ্ঞ শিক্ষক তেমনি শরীর চর্চা ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য রয়েছে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক। বিদ্যালয় সংলগ্ন রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ । রয়েছে মুক্ত মঞ্চ। যেখান থেকে জাতীয় দিবস, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা পরিচালনা করা হয় । মঞ্চের পেছনে আছে পুকুর। । আছে মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদদের সম্মান জানানোর জন্য স্মৃতিসৌধ। নান্দনীক পতাকা স্ট্যান্ড ও কুচকাওয়াজে সালাম বিনিময়ের জায়গা ।
প্রতিষ্ঠানটিতে সংযোজিত হয়েছে ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। রয়েছে ১৩ টি কম্পিউটার ও দুটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর ও একটি স্মার্টবোর্ড। রয়েছে নিজস্ব জেনারেটর ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের বিশ্রামের জন্য মাঠের চার পাশে বকুল চত্বর, ত্রিভুজ চত্বর নামে বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনার জন্য রয়েছে আধুনিক মানের লাইব্রেরী। স্পান করা হয়েছে বাস্কেটবল কোট যা জেলার অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে নেই। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিতে উজ্জ্বলতার সাক্ষর রাখায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কৃত হয়। আছে মুসলিম শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নামাজের জন্য শৈল্পিক কারুকাজ খচিত মসজিদ ।
শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলায় কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে বিদ্যালয়টি। ছেলেদের বাস্কেটবলে ৭ বার জেলা চ্যাম্পিয়ন, দুবার বিভাগীয় রানার্স আপ, মেয়েদের ক্রিকেটে পাঁচবার জেলা চ্যাম্পিয়ন, কাবাডি খেলায় সাত বার জেলা চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় শিশু প্রতিযোগীতায় বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন, সংগীতে বাংলাদেশ রানার্স আপ, বিতর্ক প্রতিযোগীতায় বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। রয়েছে সুসজ্জিত স্কাউটস টীম। বিশেষ করে জাতীয় দিবসে ছেলে- মেয়েদের মনোমুগ্ধকর শারীরিক কসরত দেখে অতিথীরা অভিভূত হন।
প্রধান শিক্ষক মোঃ হাসান আল নুরানী জানান, স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় একটি আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সকল শিক্ষক কর্মচারীদের উদ্বুদ্ধ করণ ছাড়াও বিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখতে সবার আগে তিনি উপস্থিত হন। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ শিক্ষক ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ে কাজ করা হচ্ছে। যাতে এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় জেলায় শীর্ষ অবস্থানে থাকতে পারে । ইতোমধ্যে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি যেমন শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে পাশাপাশি আমাকে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভবিষ্যতে সকল শিক্ষার্থীর মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ফজলুর রহমান বিশ্বাস জানান, অর্থের বিনিময়ে কোন শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে যদি মেধাবীদেরকে নিয়োগ দেয়া যায় তাহলে ওই শিক্ষকের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা সম্ভব। এখানে তাই করা হয়েছে। শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে স্বচ্ছতার কারণে ও শিক্ষক কর্মচারীদের টীম ওয়ার্কের কারণে প্রতিষ্ঠানটি আজ সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যালয়ের নিজস্ব পুকুর সংস্কার কাজ চলছে। ঐ পুকুরে ছাত্রছাত্রীদের সাঁতার প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হবে এবং বিভিন্ন রাইড বসিয়ে পুকুরটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হবে।
জোড়পুকুরিয়া বিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও তেরাইল জোড়পুকুরিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রেজাউল হক বলেন, এই স্কুলের কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা ও শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের সাথে পাশ করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে কাজ করছেন।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার বলেন, উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে হাসান আল নুরানী ব্যতিক্রম। মেধা, পরিশ্রম, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে এই বিদ্যালয়টিকে আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় জেলার শীর্ষে অবস্থানের গৌরব অর্জন করেছে । সেই সাথে প্রধান শিক্ষক হাসান আল নুরানী তাঁর নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতার কারনে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হবার গৌরব অর্জন করেন । তিনি আরও বলেন ঐ স্কুলের সভাপতি ফজলুর রহমান বিশ্বাসও জন্য নিবেদিত প্রাণ। যার কারনে সম্ভব হয়েছে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধনের । বিদ্যালয়ের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসও প্রদান করেন এই কর্মকর্তা।