অধ্যক্ষ সেলিনাকে বরখাস্ত বাতিল দাবি
ঢাকাঃ ফেসবুকে পোস্টের জেরে চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কবি সেলিনা শেলীকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও প্রতিহিংসামূলক’ অভিহিত করে বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’।
বুধবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ হয়। এতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিও জানানো হয়।
সমাবেশে সাবেক ছাত্রনেতা আকরামুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাট্যকার রতন সিদ্দিকী, সংগঠনটির সংগঠক ও প্রকাশক রবীন আহসান, সাবেক ছাত্রনেতা শরিফুজ্জামান, কবি শাহেদ কায়সার, লেখক রাজীব নূর, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, কবি আলফ্রেড খোকন, কবি আফরোজা সোমা, কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন, কবি সাকিরা পারভীন সুমা, মুশফিকা লাইজু, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, লেখক সামিয়া ইসলাম সোমা, ছাত্রনেতা সুমাইয়া সেতু প্রমুখ।
নাট্যকার রতন সিদ্দিকী বলেন, সেলিনা শেলী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রগতিশীল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এজন্য তিনি শিবিরের হামলার শিকারও হয়েছেন। সেলিনা শেলী যখন কলেজে শিক্ষকতার চাকরি নিলেন, তখন থেকেই জামাত-শিবিরের টার্গেটে ছিলেন। ফেসবুকে লেখা একটা পোস্টকে ইস্যু বানিয়ে তারা এখন সেলিনা শেলীকে চাকরিচ্যুত করেছে।
কবি তো শব্দ নিয়েই কাজ করেন মন্তব্য করে কবি আফরোজা সোমা বলেন, রমজান কেন ‘রামাদান’ হলো, সেটা নিয়ে সেলিনা শেলী ফেসবুকে একটু স্যাটায়ার করেছেন। তার জন্য চাকরিচ্যুত করাটা ভীষণ অন্যায়। ডিজিটাল অ্যাক্টের মাধ্যমে এখন সামান্য বিষয়কেও যেভাবে দমন করা হচ্ছে, সেটা ভীতিকর। কণ্ঠরোধ করার এই আইন বাতিল করতে হবে এবং কবি সেলিনা শেলী যে ভীতিকর অবস্থায় রয়েছেন, তাকে চাকরি ফিরিয়ে দিয়ে মত প্রকাশের পথকে মুক্ত করে রাখতে হবে৷
রবীন আহসান বলেন, একজন কবিকে ফেসবুকে কয়েকটি শব্দ লেখার জন্য চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এটি ন্যক্কারজনক। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার কণ্ঠরোধ করে দিচ্ছে। আমরা এই আইন বাতিলের দাবিতে ৬০টিরও বেশি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি।
আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে সাম্প্রদায়িক চাষাবাদ করছে, সেখানে সেলিনা শেলীর মতো প্রগতিশীল মানুষ আক্রান্ত হবেন, এতে আমি অবাক হই না। তারা এখন সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আঁতাত করছে।
অমিত রঞ্জন দে বলেন, কোনো রকম তদন্ত না করে সেলিনা শেলীকে যেভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সেটা অন্যায়। এই অন্যায় যারা করেছে সেই বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কলেজ পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত রোববার চট্টগ্রাম বন্দর মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিনা আক্তার শেলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মমিনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সেলিনা আক্তার শেলীকে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের নোটিশে বলা হয়, ফেসবুকে পবিত্র রমজান মাসের আরবি উচ্চারণ ‘রামাদান’কে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে অসংখ্য মানুষ আপনার পোস্টের মন্তব্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া জানায়। এতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর প্রতিবাদে মিছিল সমাবেশে বন্দর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বিভাগীয় মামলা করার কথাও বলা হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়