শিক্ষক-প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) নিয়োগ প্রক্রিয়া স্পষ্টীকরণের দাবিতে স্মারকলিপি
২৫-মে, ২০২১ তারিখ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশী ঐক্য- (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং সচিব- মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বরাবর সহঃশিক্ষক-প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) পদের সম্ভাব্য নিয়োগ জটিলতা নিরসন এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্পষ্টীকরণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চে নতুন করে "বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১" প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে সহকারী গ্রন্থাগারিক এবং গ্রন্থাগারিকদের পদমর্যাদা পরিবর্তন করে যথাক্রমে সহঃশিক্ষক ও প্রভাষক (গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান) মর্যাদা দেয়া হয়।
শিক্ষক পদমর্যাদা হওয়ায় এই পদদ্বয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীন যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে নীতিমালায় সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা দেওয়া নেই। এতে করে এই পদদ্বয়ে চাকরির অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার চাকরি প্রত্যাশী চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সহকারী গ্রন্থাগারিক পদটি শিক্ষক পদমর্যাদা পাওয়ায় এর নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএতে চলে যেতে পারে। কেননা এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে এনটিআরসিএ।
তবে চাকরি প্রত্যাশীরা মনে করেন শিক্ষক পদমর্যাদা পেশাগত ক্ষেত্রে সম্মান বয়ে আনলেও এর ফলে পদদুটির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হবে। যেহেতু এন্ট্রি পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি এনটিআরসিএর উপর ন্যস্ত। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া এনটিআরসিএতে দেওয়া হলে তা হবে সময় সাপেক্ষ।
গ্রন্থাগার পেশায় চাকরি প্রত্যাশী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক নীতিমালার এই পরিবর্তনকে ইতিবাচক মনে করলেও তার মতে, শিক্ষক-প্রভাষক মর্যাদার ফলে পদদুটির নিয়োগ এনটিআরসিএর অধীনে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে আর এতে করে নিয়োগ জটিলতার সৃষ্টি হবে। এরূপ পদমর্যাদা দেওয়া হলেও নীতিমালা অনুযায়ী কার্যত পদদুটির সুযোগ সুবিধা, বেতন-ভাতা ইত্যাদি পূর্বের ন্যায় বহাল থাকবে। সংশ্লিষ্ট পদের কোনো পাঠ্যবই নেই তাই পদদুটি নন-টিচিং। তাছাড়া পদ সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দায়িত্বেরও মূলত কোনো পরিবর্তন হবে না। তাই পদদুটি প্রকৃত শিক্ষক প্যাটার্নের সাথে সাংঘর্ষিক।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন মূলত কোন পাঠ্যবিষয়ে প্রার্থীর শিক্ষকতার যোগ্যতা যাচাইয়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই পাঠ্যবই ছাড়া সে বিষয়ের নিবন্ধনের কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাছাড়া এনটিআরসিএর নিয়োগ দীর্ঘসূত্রতা সবার জানা। তাদের একটি চূড়ান্ত নিয়োগ (গণবিজ্ঞপ্তি) প্রসেস করতে ২-৩ বছর সময় লাগে। বর্তমান লাইব্রেরি সায়েন্স কোর্সধারীদের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের বয়স ৩২-৩৩ বছরের উপরে।
এতে করে অনেকের বয়স সীমা শেষ হয়ে যাবে। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ভবিষ্যতে এনটিআরসিএ বিলুপ্ত হয়ে স্থায়ী জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন হবার কথা, তাই এনটিআরসিএর অস্তিত্বও অনিশ্চয়তায় আছে। আবার বর্তমান প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ কার্যক্রম মামলা জনিত কারণে বিলম্বিত হওয়ায় চাকরি প্রত্যাশীদের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে যাচ্ছে।
তাই এখনি এনটিআরসিএর অধীন দেওয়া মানে পদদুটির নিয়োগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে, যা চাকরি চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য কাম্য নয়। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় পদ দু'টির নিয়োগ আপাতত কমিটির অধীন চলমান রাখা বাঞ্ছনীয়। তাই আমাদের (সংগঠনের) পক্ষ থেকে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মারকলিপি দেওয়া হল। তবে আমরা লকডাউন পরিস্থিতির ফলে গত ২৫-এপ্রিল তারিখে স্মারকলিপিটি মাউশির নীতিমালা সংশ্লিষ্ট ৬জন কর্মকর্তার ( শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ) নিকট ইমেইল ও হোয়াটসঅ্যাপে স্মারকলিপি প্রেরণ করেছিলাম।
স্মারকলিপিটি ঐ কর্মকর্তাদের অনেকেই পেয়েছিলেন বলেও আমরা নিশ্চিত হই। তবে তা অনানুষ্ঠানিক ছিল বলে পুনরায় আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মারকলিপিটি প্রেরণ করা হলো। আশাকরি বর্তমান পরিস্থিতি, এনটিআরসিএর চলমান নিয়োগ জটিলতা এবং চাকরি প্রত্যাশীদের বয়স বিবেচনায় মন্ত্রণালয় নিয়োগ জটিলতা নিরসনে একটা গ্রহণযোগ্য নির্দেশনা জারি করবে। আর মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের প্রধান দাবি হলো নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখা।
উল্লেখ্য, নতুন নীতিমালা প্রকাশের পর(২৮ মার্চ) থেকে পদদুটির নিয়োগে ডিজি প্রতিনিধি অনুমোদন দেওয়া বন্ধ আছে। ফলে চাকরি প্রত্যাশীরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি নিরসনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ ফজল কবীর খানের প্রত্যয়নে নাগরিক আবেদন রশিদে ই-ফাইলিং এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকট এই স্মারকলিপিটি পাঠানো হয়।