শিক্ষক নিয়োগে ‘এনটিআরসিএ’র দুরবস্থা
।৷ সাধন সরকার।।
গত ৬ জুলাই বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক ‘ইত্তেফাকে’র শেষ পাতায় ‘মামলার জালে শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে শিক্ষক নিয়োগে ‘এনটিআরসিএ’র (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) দুরবস্থার চিত্র আর হবু শিক্ষকদের আশা-বেদনার প্রতিফলন হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগদানের ক্ষমতা গভর্নিং বডির কাছ থেকে এনটিআরসিএর হাতে যাওয়ার পর থেকে শিক্ষক নিয়োগে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে একের পর এক মামলার জালে আটকে হযবরল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পরীক্ষা পদ্ধতি ও নিয়োগে ব্যাপক পরিবর্তন আনে এনটিআরসিএ। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা গভর্নিং বডির কাছ থেকে এনটিআরসিএর হাতে আসার পর নিবন্ধিত শিক্ষকরা ভেবেছিল শিক্ষক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির প্রভাব ও তথাকথিত গোপন লেনদেন বাণিজ্য বন্ধ হবে। হয়েছেও তাই। নিবন্ধিত শিক্ষকরা এখন জাতীয় মেধাতালিকা অনুসারে এনটিআরসিএর মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ পাচ্ছে। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগের সময় কিছু পদ্ধতিগত সমস্যা দেখা দেয়। যদিও সেসব সমস্যা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে এনটিআরসিএ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, প্রত্যেক গণবিজ্ঞপ্তিতে লাখ লাখ নিয়োগপ্রত্যাশী নিবন্ধিতদের কাছ থেকে চূড়ান্ত নিয়োগের আগ মুহূর্তে ‘পকেট কাটা’ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। বাছাই পরীক্ষার শুরুতে আবেদনের সময় টাকা নেওয়া হবে ভালো কথা তাই বলে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে আবার আবেদনের মাধ্যমে নিবন্ধিত নিয়োগপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লটারির মতো ভাগ্য নির্ধারণ করে বেকারদের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়ার কী সুফল থাকতে পারে। এমন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে তো বটেই বিশ্বের আর কোনো দেশে আছে বলে জানা নেই। আবার গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করলেই যে চাকরি হবে তার কোনো ভরসা নেই। দেখা গেছে, ‘যত খুশি তত আবেদনের’ এই তুঘলকি কাণ্ডে বহু মেধাবী নিবন্ধিত শিক্ষকের চাকরি হয়নি আবার অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীর চাকরি হয়ে গেছে। সম্প্রতি ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে (৩০ এপ্রিল প্রকাশিত) চূড়ান্ত নিয়োগের সুপারিশ করতে নিবন্ধিত শিক্ষকদের কাছ থেকে আবেদন নিলেও নানা সমস্যায় লাখ লাখ নিয়োগপ্রত্যাশীর ফলাফল এখনো দিতে পারেনি এনটিআরসিএ। যদিও দ্রুত ফলাফল দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠার পর নিয়োগে স্বচ্ছতা এসেছে, সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। এই ইতিবাচকতা কোনো অসাধু প্রক্রিয়া ও ব্যক্তির দ্বারা যেন হারিয়ে না যায়। সময় হয়েছে গণবিজ্ঞপ্তির ধারাবাহিকতা বাজায় রাখা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে নিবন্ধিত শিক্ষকদের কাছ থেকে ‘পকেট কাটা’ বন্ধ করা। শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে চলমান ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি মোতাবেক হবু শিক্ষকদের দ্রুত নিয়োগের সুপারিশ আশা করছি।
নারিন্দা, সূত্রাপুর, ঢাকা