শিক্ষকদের বেতন ড্রাইভারের চাইতেও কম সরকারের টনক নড়বে কবে?
।। সিমরান জামান।।
পৃথিবীর প্রায় সকল উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষকতা একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানজনক পেশা। শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় সম্মানের পাশাপাশি তাদের বেতনও উচ্চতর স্কেলে দেওয়া হয়। শিক্ষকেরা আর্থিক সুবিধা ছাড়াও রাষ্ট্র থেকে বিভিন্নরকম সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে। সে হিসেবে আমাদের দেশে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ও মর্যাদা এখনো সেইভাবে রাষ্ট্র দিতে পারেনি, এ জন্যই শিক্ষকেরা এখনো সমাজে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। আমাদের দেশে প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন সরকারের একজন গাড়ির ড্রাইভারের চাইতেও কম!
অষ্টম শ্রেণী পাশ ড্রাইভার কত সুযোগ সুবিধা পায় পেতেই পারে সেখানে আমার কথা নেই। কিন্তু কথা হলো বেসরকারি শিক্ষক বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কম একজন অষ্টম শ্রেণী পাশ ড্রাইভারের চেয়ে। এটা ভাবতেই বুক শিউরে ওঠে। একজন শিক্ষককে মাষ্টার্স পাস করে শিক্ষকতায় আসতে হয়। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা তাদের তিলে তিলে গড়ে তোলেন। শিক্ষকরা প্রেসক্লাব, শহীদ মিনার, জেলায় জেলায়, কোট কাচারিতে দিনের পর দিন মাসের পর মাস দাবি আদায় করার জন্য সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচী সহ এমন কোন কাজ নাই করে নাই। কবি কাজী কাদের নেওয়াজের কবিতায় আমরা শিক্ষাগুরুর মর্যাদা সম্পর্কে পড়েছিলাম। অথচ শিক্ষকদের মর্যাদা এখন শুধু পাঠ্যপুস্তকেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে নেই।
বর্তমান সরকার শুরু থেকেই শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো করা হবে বলে জানিয়ে আসছিল। অথচ সরকারের মেয়াদ শেষ হয় আবার সরকার আসে কিন্তু সরকার শিক্সকদের দাবী বাস্তবায়ন করে না। শিক্ষকরা আন্দোলন করলে সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের টনক নড়ে লোক দেখানো ফাইল চালাচালি শুরু হয়। আলোর মুখ আর দেখে না।
একজন শিক্ষককে দীর্ঘদিনের চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। যার চর্চা যত বেশি তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার তত বেশি পরিপূর্ণ হবে কিন্তু সে শিক্ষকের যদি চর্চা করার সুযোগ না থাকে তাহলে আদৌ ভালো শিক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিণত করা সম্ভব হবে কী করে। শিক্ষকতা পেশায় পদোন্নতি একবারেই নেই বললে চলে, এই কারণে শিক্ষকেরা কাজে কর্মে নিরাশ হয়ে পড়েন। দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে পদোন্নতির সুযোগ না থাকে, তাহলে তার এই পেশার প্রতি একঘেঁয়েমি বা বিরক্তি চলে আসবে। যোগ্যতা অনুসারে পদোন্নতির সুযোগ রাখলে, তিনি তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবেন। এতে কাজেও যেমন গতি আসবে এবং মনেও প্রশান্তি আসবে।
শিক্ষকেরা আর দারিদ্র্যের খেতাব নিয়ে শিক্ষকতা করতে চান না, সমাজে অন্য দশজন ব্যক্তি যেভাবে উন্নত জীবন যাপন করে সেভাবে শিক্ষক সমাজও বাঁচতে চান। সরকার শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবিগুলো বিবেচনায় এনে শিক্ষক সমাজকে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করবেন, দেশকে যেমন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার সাথে তুলনা করেন তেমনি ঐ দেশের শিক্ষকদের মত বেতন-কাঠামোর ব্যবস্থা করবেন এবং শিক্ষক সমাজ যাতে মানুয় গড়ায় মনোনিবেশ করতে পারে সেই প্রত্যাশা লক্ষ লক্ষ শিক্ষক সমাজের।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/১৫/০৩/২০২৪