শিক্ষকদের একদিনের বেতন অথবা বৈশাখী ভাতা কর্তন কতটা যৌক্তিক ?
"করোনা ফান্ড " নামে শিক্ষকদের একদিনের বেতন অথবা এবারের বৈশাখী ভাতা মুক্ত হস্তে দান করার জন্য একজন শিক্ষক নেতার স্ট্যাটাশ দেখলাম। দেখে মনে হচ্ছে এ টাকার ওপর আমাদের কোন অধিকার নেই। আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও চাই এই মহামারিতে ফান্ড গঠন করা হউক কিন্তু কাউকে জোর পূর্বক বাধ্য করে নয়
। সকলের সহযোগিতায়। কেউ যদি এই ফান্ডে স্বেচ্ছায় অংশ গ্রহণ করতে চায় তাহলে ঠিক আছে নতুবা নয়। একজন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক কত কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তা মনে হয় ঐ শিক্ষক নেতা ভুলে গেছেন। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যা সরকারি অংশ পায় তা দিয়ে সংসারের ভরণপোষণ করাই কঠিন। বাড়ি ভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা তো নাম মাত্র। উৎসব বোনাস ২৫ শতাংশ, বৈশাখী ভাতা বৎসরে একবার ২০ শতাংশ হারে পাওয়া যায়।
এই বৈশাখী ভাতা কিংবা একদিনের বেতন যদি করোনা ফান্ড নামে কর্তন করা হয় তাহলে সেটা হবে শিক্ষকদের জন্য হতাশাজনক। অনেক কষ্টে অর্জিত বৈশাখী ভাতা যদি কর্তন করা হয় তাহলে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বৈশাখী উৎসব পালন হবে ম্লান।
পরিবারের সদস্যরা হবে বৈশাখী উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনার ওপর কেউ যদি শক্তি প্রয়োগ করে কর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে সেটা কোন মতেই শিক্ষক সমাজ মেনে নিবে না। শিক্ষক সমাজ এমনিতেই বৈষম্যের স্বীকার। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল স্কেলের সিংহভাগ চলে যায় কর্তন করার ফলে।
বর্তমানে ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা হয় অবসর ও কল্যান তহবিল নামে। যদি বল প্রয়োগ করে কর্তন করা হয় তাহলে শিক্ষকদের ওপর তা হবে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া যদি কেউ কর্তন করার পরিকল্পনা করে তা আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ কখনো মেনে নিব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাদের করোনা ফান্ডে মুক্ত হস্তে দান করার নির্দেশ দেয় তাহলেই কেবল আমরা তা মেনে নিব নতুবা কারোর একক সিদ্ধান্তের কারণে নয়। এই পরিকল্পনা কারীর নিকট একটিই অনুরোধ আপনি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আর কষ্ট দিবেন না। আজ সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সত্য কিন্তু কোন দেশে শিক্ষক সমাজের বেতন কর্তন কিংবা উৎসব ভাতা কর্তনের ঘটনা ঘটেছে বলে বর্তমানে মনে হচ্ছে না। বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে নিজ উদ্যোগে ফান্ড গঠন করা হচ্ছে জোর পূর্বক নয় বা বাধ্য করে নয়।
আমরা বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ এমনিতেই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। কর্তন করা হলে সংসার চালাতে অনেক শিক্ষককে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত টাকা যদি কেউ কর্তন করার পরিকল্পনা করে থাকে তাহলে সেটা হবে শিক্ষকদের জন্য হুমকি স্বরূপ। আগে শিক্ষকদের বাঁচতে দেন তারপর কর্তন করার সিদ্ধান্ত নিন। আমরাও বাঁচতে চাই স্বাভাবিক পরিবেশে টেনশন করে নয়। বর্তমানে শিক্ষকরা এই স্ট্যাটাশ দেখে টেনশনে আছে কারণ অতিরিক্ত কর্তন করার ফলে অনেকে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাই সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে স্ট্যাটাশ দেওয়া উচিত ছিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ আপনি বিবেচনা করে দেখুন শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা। এই অবস্থায় যদি শিক্ষকদের একদিনের বেতন কিংবা বৈশাখী ভাতা কর্তন করা হয় তাহলে শিক্ষক সমাজ চলবে কীভাবে। তাই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতি আপনি একটু সহায় হোন। রক্ষা করুন আমাদের জীবন। শিক্ষক সমাজ চিরকাল স্মরণে রাখবে আপনার এই অবদান।
লেখক-
মোঃ আবুল হোসেন
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
বাশিস (কেন্দ্রীয় কমিটি)