শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে যা বললেন মাউশি ডিজি
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ এবারের এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা আগামী ৩০ এপ্রিল শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা ও আগাম অভিনন্দন জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি পরীক্ষায় ভালো করার ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি অভিভাবক এবং শিক্ষকসহ পরীক্ষার কাজে সংশ্লিষ্টদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
শুরুতেই পরীক্ষাদের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি বলেন, আগের ঘোষণা অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ পরই ছাত্রছাত্রীরা তাদের জীবনের অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসবে। সাধারণত ১ ফেব্রুয়ারি এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি কোভিড পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীরা এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ কঠিন সময় পার করে এসেছে। এ বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে এবারের পরীক্ষার্থীদের জন্য দুটি দিক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, তাদের সিলেবাস ছোট করা হয়েছে, যেটিকে ‘কাস্টমাইজড’ সিলেবাস বলা হচ্ছে। প্রয়োজনের নিরিখে সংক্ষিপ্ত এ সিলেবাসে তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের পরীক্ষা তিন মাস পিছিয়ে ৩০ এপ্রিল নেওয়া হচ্ছে। পরীক্ষা সমাগত। বিগত দু’বছর ছাত্রছাত্রীরা যা পড়েছে, তাদের সেই জানা বিষয়ের উপরই এখন পরীক্ষা নেওয়া হবে। আসলে পরীক্ষা বলা হলেও এটি মূলত মূল্যায়ন। তাই ছাত্রছাত্রীদের এ নিয়ে বিচলিত বা খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যারা নিয়মিত লেখাপড়া করেছ, মূল পাঠ্যবই গুরুত্ব দিয়েছ, তাদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই ভালো হবে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য তোমরা অর্জন করবে।’
অধ্যাপক আহমেদ বলেন, ‘সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবেশে এ পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। কাস্টমাইজড সিলেবাস হলেও এবার শতভাগ বা পূর্ণ নম্বরেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রত্যেক বোর্ডের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া আছে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা সেটি দেখে নিতে পারেন।’
‘সম্মানিত শিক্ষকরা শিক্ষা প্রশাসনেরই অংশ। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীরা আপনার সন্তানের মতোই। তাই পরীক্ষার দিন আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে যেভাবে ইতিবাচক ও কোমল আচরণ করে থাকেন, পরীক্ষার হলেও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে একই আচরণ করবেন।
অধ্যাপক নেহাল আহমেদ
তিনি বলেন, ‘আগেই আমি বলেছি এটা পরীক্ষা নয় মূল্যায়ন। যারা সারা বছর লেখাপড়া করেছে এবং মূল পাঠ্যবই গুরুত্ব দিয়েছে- তারা সেরা সাফল্য অর্জন করবেই। এরপরও আমি কিছু দিকে গুরুত্ব দিতে বলব। সেটি হচ্ছে, এমসিকিউ অংশে শতভাগ নম্বর পাওয়ার চেষ্টা থাকতে হবে। কেননা সৃজনশীল বা তত্ত্বীয় অংশে সাধারণত নম্বর কমে যেতে পারে। এখনো সময় আছে, মূল পাঠ্যবই যদি ভালো করে কেউ পড়, তাহলে তার এমসিকিউ অংশে কোনো সমস্যা হবে না। পাশাপাশি সময়ের দিকে তাকিয়ে সৃজনশীল অংশের উত্তর লিখতে হবে। সব প্রশ্নের উত্তর লিখে আসতে হবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর বাদ দেওয়া যাবে না। ’
পরীক্ষা-কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি জানান, ইতোমধ্যে মুদ্রিত প্রশ্নপত্র মাঠপর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশ্নপত্রের সর্টিং বা বাছাই কাজটি সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে করা হবে। আর জেলায় এই কাজটি জেলা ট্রেজারি অফিসারের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হবে। প্রতি বিষয়ে একাধিক সেট প্রশ্নপত্র ইতোমধ্যে সারাদেশে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনদিন কোন সেটে পরীক্ষা হবে তা পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে বা সব পরীক্ষার্থী তার আসনে বসার ৫ মিনিট পরে জানানো হবে। অর্থাৎ, সকালের পরীক্ষা যদি বেলা ১০টায় শুরু হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদেরকে সাড়ে ৯টায় আর বিকালের পরীক্ষায় দুপুর ২টায় হলে দেড়টার মধ্যে নিজ নিজ আসনে বসতে হবে। এরপরও কেন্দ্রে প্রবেশ অনুমোদন করা হবে। কিন্তু তাদের নাম-পরিচয় বিস্তারিত নোট রাখা হবে। যৌক্তিক কারণ দেখাতে হবে। এছাড়া তাদের আরও কিছু করণীয় আছে। শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রকাশিত পরীক্ষার রুটিনের নিচে উল্লিখিত ১৪টি বিশেষ নির্দেশাবলী যদি তারা অনুসরণ করে, তাহলে কোনো ধরনের ঝক্কিতে তাদের পড়তে হবে না।
ঢাকা বোর্ডের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরীক্ষায় ভালো করার জন্য জরুরি শারীরিক সুস্থতা। পরীক্ষার আগের রাতে বেশি জেগে থাকলে বা পর্যাপ্ত না ঘুমালে পরীক্ষার হলে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এটিকে নজর রাখার দায়িত্ব অভিভাবকের। কেননা, সারা বছর যা লেখাপড়া করেছে, পরীক্ষার আগে তার বেশি আত্মস্থ করার সুযোগ নেই। যেহেতু পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে নিজ নিজ সিটে বসতে হবে, তাই বেশ আগেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে। এটি বিবেচনায় রাখতে হবে। তাই কেন্দ্রের দূরত্ব, যানজট, যানবাহনের প্রাপ্যতা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হবে। এমনভাবে রওনা দিতে হবে, প্রয়োজনে ৩০ মিনিটেরও আগে যেন কেন্দ্রে পৌঁছানো যায়। কেননা, কেন্দ্রে ঢোকার অযথা তাড়াহুড়া মনোজগতে প্রভাব ফেলতে পারে। এতে পরীক্ষা খারাপ হতে পারে।’
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস করা কিছুতেই সম্ভব নয়। সম্ভব কেবল গুজব আর অপপ্রচার। প্রশ্নফাঁসের সব ফাঁক-ফোকর বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখন ফাঁস বললে সেটা গুজব ছাড়া আর কিছুই হবে না। পরীক্ষার আগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি ছড়িয়ে একদিকে অর্থ উপার্জন করতে চায়, আরেকদিকে তারা সরকারকে রাজনৈতিকভাবে বিব্রত করতে চায়। এ দুটি ফৌজদারি অপরাধ। গত কয়েকবছরের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে, ষড়যন্ত্রকারীরা যা ছড়ায় তার সবই গুজব। বিদ্যমান ব্যবস্থায় প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। তবে গুজব রটনা ও অপপ্রচারকারীদের পাকড়াও করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ আছে। কেউ রেহাই পাবে না।’
তিনি প্রসঙ্গক্রমে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি। আপনার সন্তান এই দেশ ও রাষ্ট্রের সম্পদ। তাকে সম্পদ হিসাবে গড়ে তুলতে মূল ভূমিকাটা আপনাকেই পালন করতে হবে। মনে রাখবেন, বর্তমানে চাকরির বাজারে বেশকিছু ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পর্যায়েও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে সামনের দিনগুলো আরও কঠিনতর হচ্ছে। গতানুগতিক অনেক কাজ মানুষের পরিবর্তে যন্ত্রের দখলে চলে যাচ্ছে। তাই সেই যন্ত্রকে জয় ও করায়ত্ত করার সক্ষমতা যদি আপনার সন্তান অর্জন না করে তাহলে তাকে বেকার থাকতে হবে। তাই সিলেবাস আর শিক্ষাক্রমে তাকে যে পড়ালেখা দেওয়া হয়েছে সেটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই আশা করা যায়, রাষ্ট্র তাকে কাঙ্ক্ষিত নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।’
তিনি এ প্রসঙ্গে অভিভাবকদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘পরীক্ষায় কেবল ভালো ফল করানোই সন্তানের সাফল্য হতে পারে না। ন্যায়নিষ্ঠ, সৎ, উদারনৈতিক সর্বোপরি ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। তাই গুজবের পেছনে ছুটে আপনিই যদি কথিত প্রশ্নপত্র খুঁজে এনে সন্তানের হাতে তুলে দেন, তাহলে সন্তানকে প্রকারান্তরে অসততা শেখানো হলো, যা তার নৈতিকতা নষ্ট করবে। আবার যেহেতু প্রশ্নফাঁস ও গুজব রটনার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, তাই কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমন অবস্থায় যদি কেউ গুজবের পেছনে ছুটতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে পাকরাও হন, সেটা তার সামাজিক মানসম্মান বিনষ্ট করবে। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’
তিনি মাঠপ্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, ‘সম্মানিত শিক্ষকরা শিক্ষা প্রশাসনেরই অংশ। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীরা আপনার সন্তানের মতোই। তাই পরীক্ষার দিন আপনি আপনার সন্তানের সঙ্গে যেভাবে ইতিবাচক ও কোমল আচরণ করে থাকেন, পরীক্ষার হলেও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে একই আচরণ করবেন। আমরা কখনো কখনো অভিযোগ পেয়ে থাকি যে, অনেকে অযথা রূঢ় আচরণ করে থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের আচরণ নিরুৎসাহিত করা হয়। পরীক্ষার হল পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালার বাইরে কারও সঙ্গে অবাঞ্ছিত আচরণ করবেন না। আরেকটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিগত এসএসসি পরীক্ষায় ভুরুঙ্গামারিতে যেসব শিক্ষক অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের জন্য গ্রেফতার হয়েছেন তারা এখনো কারাগারে আছেন। শুধু তাই নয়, নীতিমালার বাইরে প্রশ্নপত্র করে যশোরে যারা চিহ্নিত হয়েছেন তাদের শাস্তি প্রক্রিয়াধীন। সরকারি-বেসরকারি কেউই চাকরি রক্ষা করতে পারবেন না। সুতরাং, কেন্দ্র প্রধানসহ পরীক্ষা সম্পৃক্ত সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, নীতিমালা মেনে এবং নিজেকে অভিভাবকের জায়গায় ভেবে পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করবেন।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১২/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়