শাবিতে বর্ষবরণের আয়োজন নেই ৪ বছর ধরে
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেটঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর ধরে বাংলা বর্ষবরণে কোনো উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে না।
২০২০ ও ২০২১ সালে ছিল করোনাভাইরাস মহামারী; ২০২২ এ হয়নি রমজানের ছুটির কারণে। এবার হচ্ছে না রমজান ও ঈদের ছুটির কারণে।
এ বছরও রমজান ও ঈদের ছুটি থাকায় নববর্ষ উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে না; আগামী বছর থেকে যথারীতি দিনটি জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা হবে বলে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য।
কোনো আয়োজন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন না করাকে 'সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা' বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ছুটির কারণে এ বছর বাংলা নববর্ষ বরণের কোনো উৎসব হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিস ও ক্লাস বন্ধ। এছাড়া পবিত্র শবে কদর ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১০ এপ্রিল থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ক্লাস-পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন।
তবে বন্ধের আগে কর্তৃপক্ষ বর্ষবরণ আয়োজনের ঘোষণা দিলে অনেকেই থাকত বলে মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৯ সালের পর থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কোনো আয়োজন হয় না। আগে নতুন বছর উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের আয়োজন থাকত। মঙ্গল শোভাযাত্রা, বিভাগ ও অনুষদভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, খেলাধুলা কিংবা পান্থা-ভাত আর ইলিশ মাছ খাওয়া – প্রভৃতি নিয়ে ক্যাম্পাস থাকত মুখরিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন থেকে শুরু করে ক্যাফেটেরিয়া, ফুড কোর্ট কিংবা টং দোকান, শহীদ মিনার থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার বা গোলচত্বর – সবখানে বৈশাখের উচ্ছলতা ছড়িয়ে থাকত।
চার বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা (২০১৯-২০, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সেশন) বর্ষবরণের কোনো উৎসব বা আয়োজন দেখছে না ক্যাম্পাসে। তাদের কাছে ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ উৎসব যেন স্বপ্নের মতো। হারিয়ে যাওয়া কোনো গল্পের মতো।
বন ও পরিবশে বিজ্ঞান বিভাগে ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী তীর্থ চন্দ্র দাস বলেন, "আমরা ক্যাম্পাসে আসার পরপরই পড়ে যাই কোভিডের যাতাকলে। সেজন্য বর্ষবরণও পাওয়া হয়নি। তারপর থেকে এই বর্ষবরণ উৎসব রমজান মাসের মধ্যে পড়ে যায়। তাই আর উদযাপন করা হয়নি।
"তবে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ ও পহেলা বৈশাখের আনন্দমুখর উদযাপনের দৃশ্য দেখে আমার ক্যাম্পাসে এ উদযাপন যেন অমাবস্যার চাঁদের মতোই রয়ে যাচ্ছে।"
পদার্থবিজ্ঞানের একই বর্ষের শিক্ষার্থী অনন্যা ঘটকের ভাষ্য, “চার বছর ধরে যদি একটি সংস্কৃতি বন্ধ থাকে, তাহলে এটি ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যেতে থাকে। এই রমজনের মধ্যে হয়তো শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো আয়োজন করা সম্ভব হয়নি; কিন্তু কর্তৃপক্ষ চাইলে এটা করতে পারত। তাহলে শিক্ষার্থীরা বর্ষবরণ উদযাপনের জন্য ক্যাম্পাসে থাকত।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ উৎসব পালন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ওই সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষও সহায়তা করছে।
বিষয়টি উল্লেখ করে শাবির মাভৈ আবৃত্তি সংসদের সভাপতি শাহরিয়া আফরিন প্রকৃতি বলেন, “করোনার কারণে হয়তো এক বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে অন্যান্য বছরগুলোতে আয়োজন করা যেত। নববর্ষ উৎসব বাঙলির ঐতিহ্য। কর্তৃপক্ষ আসলে এটা করতে চাচ্ছে না।”
অনুষ্ঠানের আয়োজন না করাকে 'সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে দমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা' বলে মনে করেনি তিনি।
তিনি বলেন, “দেশের প্রথম সারির অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্ষবরণের নানা আয়োজন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আয়োজন না থাকা খুবই হতাশাজনক। আশা করি, কর্তৃপক্ষ পরের বছর থেকে বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখবেন।”
সিলেট জেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের আয়োজন থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক বললেন এ শিক্ষার্থী।
পরিসংখ্যান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুয়েল সরকার বলেন, “আগে অনেক অনুষ্ঠান হতো। আমি দুইটা পহলো বৈশাখ উৎযাপন করেছি এখানে। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেক মানুষ আসত। মানুষের অনেক ভিড় থাকত বলে ক্যাম্পাসের ভিতরে গাড়ি আসতে দিত না এদিন। খুব ভালো দিন কাটত।”
আগের দিনগুলোতে পহেলা বৈশাখের আযোজনে অংশগ্রহণ করতেন শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। তারা সপরিবারে ক্যাম্পাসে আসতেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন বলেন, “করোনার কারণে বিভিন্ন প্রোগ্রামাদি আমরা পালন করতে পারিনি। তবে করোনার পর আমরা আবার আগের জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় দিবস, জাতীয় উৎসবসহ বিভিন্ন উৎসব আমরা পালন করে যাচ্ছি।”
পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদুল ফিতরের বন্ধ থাকায় নববর্ষ উদযাপন করা সম্ভব হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এর আগে আমরা নববর্ষ উদযাপন করেছি; যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এবং বাইরে থেকেও অনেক মানুষ আসত।”
আগামী বছর জাঁকজমকভাবে দিনটি উদযাপন করা হবে বলে জানান অধ্যাপক আমিনা পারভীন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৪/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়