শতভাগ প্রধান শিক্ষক-সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেয়া হক
গাজী আরিফ মান্নানঃ সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের দুটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ‘উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা’ পদে পরীক্ষার সুযোগ রাখা হয়েছে, শর্ত দুটি হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে। বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রধান শিক্ষকদের পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের জন্যও আবেদনের সুযোগ রাখায় সারাদেশের মেধাবী-তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত হচ্ছে। সহকারী শিক্ষকরাও নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে, তারাও আশাবাদী একদিন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা হবেন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানে শিক্ষক থেকে কর্মকর্তা হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা ভালোমতোই বুঝতে পারবেন, যা বাইরে থেকে আসা কর্মকর্তাদের বুঝে উঠতে সময় লাগবে।
বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে অতীতে অনেক শিক্ষকই কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাই পরে এভাবেই শতভাগ নিয়োগ চলমান থাকা উচিত। তাছাড়া একজন চাকরিজীবীর পেশাগত জীবনে ধাপে ধাপে পদোন্নতির সুযোগ থাকলে কাজে কর্মস্পৃহা ও আত্মমর্যাদা বাড়ে। সব সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন পদে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির সুযোগ বিদ্যমান থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির অচলাবস্থায় পুরো শিক্ষক সমাজ বিশেষ করে মেধাবী-তরুণ শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট এবং শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ কেউ সুযোগ বুঝে অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে আবারো ৪৫তম বিসিএস থেকে ৪৫৬ জন, আর ৪০তম বিসিএস থেকে ৩৮৪ জনকে বিসিএস নন-ক্যাডার পদে তথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়া জন্য সার্কুলার জারি করা হয়। এখন আবারো বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে পদগুলো পূরণের সার্কুলার জারি করায় দীর্ঘসময় পদোন্নতিবিহীন চলতি দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা মনঃক্ষুণ্ন ও হতাশ হয়ে পড়ছেন। আমরা জানি একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে অবশ্যই দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হয়, যেটা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, কিন্তু এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ এর উল্টো চিত্র দেখা যায়।
নিজ ডিপার্টমেন্টে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা থাকতে বাইরে থেকে তথা প্রশাসনিক কাজে একদম আনকোরা জনবল নিয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে দায়িত্ব দেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত তা একেবারেই বোধগম্য নয়। চাকরিজীবনে কেউ কখনো ব্লক পোস্টে আটকে থাকুক তা কোনোভাবেই কাম্য নয়, এতে যেমন বেতন-ভাতা বা গ্রেড বাড়ে না, তেমনি শিক্ষকদের আত্মমর্যাদাও বাড়ে না। মেধাবী শিক্ষকরা একসময় পদোন্নতির মাধ্যমে কাক্সিক্ষত শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে চাকরিজীবন সুন্দরভাবে শেষ করতে পারলেই তাদের পেশাগত জীবন ধন্য হবে। আশা করব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির বিষয়টি চলমান রাখবেন।
বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করলে দেখা যায় যে, বেতন-ভাতা ও গ্রেড বৈষম্যের কারণে অনেকে যোগদান করেন না, আবার কিছুসংখ্যক যোগদান করে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজের চাপে উক্ত চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশায় চলে যান, এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থেকে যায়। তখন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়, এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি আবার প্রশাসনিক কাজগুলোও চালাতে বেগ পেতে হয়, ফলে এভাবে শিক্ষক সংকটে প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার মান আরো দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজ ডিপার্টমেন্টে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে একই পদে থেকেই অনেকের কর্মজীবন শেষ হয়ে যায়, আর এভাবেই আমাদের মেধাবী শিক্ষকরা চরমভাবে পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই বিসিএস নন-ক্যাডার বা সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক থেকে শতভাগ প্রধান শিক্ষক/সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি প্রদান করা হোক।
লেখক: শিক্ষক, ফেনী।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৭/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়