শঙ্কা নিয়েই শুরু অলিম্পিক
নিউজ ডেস্ক।।
অবশেষে পর্দা উঠল করোনায় এক বছর পিছিয়ে যাওয়া টোকিও অলিম্পিকের। গতকাল টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আতশবাজির ঝলকানি।
বিরল এক অলিম্পিকই বটে। করোনার কারণে পিছিয়েছে এক বছর। কোনো দর্শক নেই। সরে দাঁড়িয়েছে বহু পৃষ্ঠপোষক। উদ্বোধনের এক দিন আগে বরখাস্ত অনুষ্ঠানের পরিচালক কেনতারো কোকায়াশি। অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান সেইকো হাশিমোতোর শঙ্কা, মাঝপথে না বাতিল করতে হয় পুরো টুর্নামেন্ট! তাই বিখ্যাত সেই উক্তি ঘুরিয়ে বলতে হচ্ছে, ‘সত্যি সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই অলিম্পিক।’
এমন উদ্বেগ, শঙ্কা আর বিতর্ক নিয়েই অবশেষে গতকাল পর্দা উঠল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর। মহামারির মাঝেও ফিরে এলো বিশ্বের সেরা ক্রীড়া আসর। টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অলিম্পিকের উদ্বোধন করলেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো। ১৯৬৪ সালে জাপানে হওয়া অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি। তখন নারুহিতোর বয়স ছিল চার বছর। তবে করোনার ভয়াবহতায় এবার রাজপরিবারের সদস্যরা আসেননি স্টেডিয়ামে। আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনরা এই মহামারির মধ্যেও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। দর্শক না থাকলেও আমন্ত্রিত অতিথি, পৃষ্ঠপোষক আর আয়োজক মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষ উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠানটা। চারবারের গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জাপানি টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা অলিম্পিক মশাল প্রজ্জ্বলন করার সময় করতালিতে মুখর করে রেখেছিলেন তাঁরাই।
জাপানের শিল্প-সংস্কৃতিই মূলত তুলে ধরেছেন পারফরমরারা। মিলনমেলার স্লোগান ছিল, ‘ইউনাইটেড বাই ইমোশন’। খেলাধুলার শক্তি ঐক্যবদ্ধ করতে পারে পুরো পৃথিবীকে। কঠিন এই সময়ে তাই ঐক্যের আবেগী আহবান অলিম্পিক কর্তাদের। আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ বলেছিলেন, ‘অ্যাথলেটরা কত দিন অপেক্ষা করেছেন এই মুহূর্তটার জন্য। এর আনন্দ, উত্তেজনাটাই আলাদা। এটা আশার সেই মুহুর্ত।’ কিন্তু করোনার রক্তচক্ষুতে সেই জৌলুসটা কোথায়? স্টেডিয়ামের বাইরেই গতকাল জড়ো হয়েছিল কয়েক শ প্রতিবাদকারী। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘বন্ধ করো অলিম্পিক’।
এমনিতে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মানে আতশবাজির রোশনাই, প্রাণের উচ্ছ্বাস আর চোখ-ধাঁধানো সব ব্যাপার। করোনার থাবায় এবার জাঁকজমক অনুষ্ঠানের উপায় ছিল না। গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন গেমসের সঙ্গে জড়িত ১৯ জন, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গেছে ১০০। তাই আলোঝলমলে করতে গিয়ে সীমাটা কখনো অতিক্রম করেনি আয়োজকরা। বরং নজর কেড়েছে জাপানি নার্স ও বক্সার তাসুবাদার মঞ্চের মাঝখানে গিয়ে একাই কিছুক্ষণ দৌড়ানোটা। করোনার কারণে অ্যাথলেটদের একা অনুশীলন করাটা ফুটিয়ে তোলা হয় প্রতীকীভাবে। আনা হয় অলিম্পিক রিং, তাতে ফিরে আসে ১৯৬৪ টোকিও অলিম্পিকের স্মৃতি। অলিম্পিক রিংয়ের বৃত্তগুলো তৈরি করা হয়েছিল সেই কাঠ দিয়ে যে গাছগুলো ১৯৬৪ সালে রোপণ করেছিলেন অ্যাথলেটরা। স্টেডিয়ামের মাঝখানে ১ হাজার ৮০০ ড্রোন দিয়ে যে পৃথিবী তৈরি হয়েছিল, চোখ-ধাঁধানো ছিল সেটা।
২০৭টি দেশের ১১ হাজার ৩০০-র বেশি অ্যাথলেট ৩৩টি খেলায় এবার লড়াই করবেন ৩৩৯টি পদকের ইভেন্টে। যোগ হয়েছে পাঁচটি নতুন খেলা আর ৩৪টি নতুন ইভেন্ট।