লেখক মিনু আক্তারের "হৃদয়ে বাংলাদেশ" নামক বই শীঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে
মোঃ মোজাহিদুর রহমান।।
লেখক মোসাম্মাৎ মিনু আক্তার একজন উদীয়মান তরুন লেখক। তার জন্ম বাগেরহাট জেলায়। পেশায় একজন শিক্ষক হলেও তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ইতিপূর্বে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত তার বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। খুব শীঘ্রই তার দ্বিতীয় বই হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বইটিতে কি থাকছে সংক্ষেপে দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু তুলে ধরা হলো।
বাঙালির ইতিহাসে এক অবিস্মরনীয় নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি আমাদের জাতির পিতা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তিনি রেখে গেছেন অসামান্য অবদান। অনন্য সাধারণ জীবনাদর্শ দৃঢ় ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মানে তাঁর অবদান তাকে ইতিহাসে চিরভাস্বর করে রেখেছে। বাঙালির কাছে তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। বঙ্গবন্ধুর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কেটেছে নিজ গ্রামের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ম্যাট্রিক, কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ এবং একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক চক্র ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি শুরু করে। বাঙালির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু সবাইকে সাথে নিয়ে অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোলেন। তার আহŸানেই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে প্রয়াসী হন। কিন্তু তার সোনার বাংলা গঠনের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। সদ্য স্বাধীন জাতির জীবনে এক অপূরনীয় ক্ষতি নিয়ে আসে এই জঘন্য হত্যাকান্ড।
বাঙালির অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। তিনি পাকিস্তানি শাসক চক্রের শীর্ষ তেইশ বছরের অত্যাচার জুলুমের নাগপাশ থেকে বাঙালিকে মুক্ত করেন। অপরিসীম ত্যাগ ও দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে এনে দেন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় স্বার্থকে বড়ো করে দেখছেন সব সময়।
এর জন্যে তাকে অসংখ্যবার কারাবরণ করতে হয়েছে। একের পর এক তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলেছে। তবু তিনি দমে যাননি, অন্যায়ের সাথে করেননি আপস বাঙালির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক চক্রের শোষন, নিপীড়ন আর বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। এই ছয় দফার পক্ষে সারা দেশ ব্যাপক গণজাগরন তৈরি হয়। এ আন্দোলন নস্যাৎ করতে পাকিস্তানি শাসকরা মামলা দায়ের করে এবং বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারা বাংলায় চলে অসহযোগ আন্দোলন। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক সুবিশাল জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ২৫-এ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ২৬ -এ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় পুরো সময়টা বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি। কিন্তু তার সম্মোহনী নেতৃত্ব মানুষের ঐক্য, শক্তি ও প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। এর ফলেই আমরা পাই স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পরিচালনার ভার নেন। তার নেতৃত্বে গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এ চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানের লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তিযোদ্ধা কল্যান ট্রাষ্ট। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা তাঁরই অবদান। বঙ্গবন্ধুই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করে বিশ্বসভায় বাংলাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর চোখে ছিল সুখী, সমৃদ্ধ, সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন।
স্বল্পোন্নত থেকে দেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। একে একে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতে দেশগুলোর তুলনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষার উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। বাংলাদেশ এখন দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নের মডেল। একটা যেসব দেশ বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ দিতো তারাই এখন উল্টো সুরে গাইছে। প্রশংসাবানে ভাসিয়ে ফেলছে। বলছে এই বাংলাদেশ আর সেই আগের বাংলাদেশ নয়। বদলে গেছে এর সব কিছুরই।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তাঁর নেতৃত্বেই এখানে উন্নয়নের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। নতুন এক উচ্চতায় সমাসীন হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ উন্নয়ন অগ্রগতি সম্মান এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার রোল মডেল একদার দক্ষিন এশিয়ার দরিদ্রতম দেশ বাংলাদেশ। আর সেই সম্মান অর্জনের চালিকাশক্তি শেখ হাসিনা। জাতির জনকের যোগ্য উত্তরসুরি উন্নত বিশ্ব আর উন্নয়নশীল বিশ্বের নতুন নেতা।
নতুন সম্ভাবনার নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি ওয়েব সাইট ও উন্নয়ন পরিকল্পনার নথিপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটি (সিডিপি) গত ১৫ মার্চ এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরনের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। এলসিডি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরনের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক এ তিনটি সূচকের যে কোন দুটি অর্জনের শর্ত থাকলেও বাংলাদেশ তিনটি সূচকের মানদন্ডেই উন্নীত হয়েছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদন্ড অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানব সম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯ অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ।
‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরন যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস। সরকারে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের এটি একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রæত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিনত হওয়ার লক্ষ্য নিধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
জন্মের ৫০ বছরের ও কম সময়ের মধ্যে দ্রæতগতি সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের মতো সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ করেছিলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিনত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এসডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিংগ সমতা, কৃষি, দারিদ্রসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমূখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক বেড়েছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ।