‘লকডাউনে জরিমানা চিকিৎসক সাংবাদিকদেরও
নিউজ ডেস্ক।।
চলমান ‘লকডাউনে’ পুলিশের বিরুদ্ধে সরকারের নিয়ম ভঙ্গ করে চিকিৎসক-সাংবাদিকদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী জরুরি কাজে নিয়োজিত হিসেবে তারা বর্তমান বিধিনিষেধের আওতার বাইরে। পেশাগত দায়িত্বপালনে তারা অবাধে চলাফেরা করতে পারার কথা। এরপরও অনেক জায়গায় পুলিশ তাদের হয়রানি ও জরিমানা করে। সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
চলমান কঠোর বিধিনিষেধের প্রথমদিন গত বুধবার এমন পরিস্থিতির শিকার হন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। তাদের একজন স্কয়ার হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের চিকিৎসক নাজমুল হক। হাইকোর্টের সামনে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে তাকে আটকানো হয়। নাজমুল হক জানান, সপ্তাহে তিনদিন তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবাও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এ কারণে গত কয়েকদিন গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ থেকে অফিস করছেন। বুধবারও নিজের গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছিলেন। হাইকোর্টের সামনে চেকপোস্টে তাকে পুলিশ সদস্যরা আটক করেন।
নাজমুল হক গণমাধ্যমকে জানান, তিনি জানেন যে চিকিৎসকরা লকডাউনের মধ্যে চলাচল করতে পারবেন। এটা জেনে তিনি তার আইডি কার্ড দেখান। এরপরও তার গাড়ির নামে তিন হাজার টাকা জরিমানা লিখে দেয়। পরে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে না বলে ওইদিনই ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ফেসবুকে এসব নিয়ে কথা উঠার পর এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে ওই চিকিৎসককে যে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল, তা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাকে ট্রাফিক অফিসে এসে বিষয়টি সমাধান করতে হবে।
বিধিনিষেধের প্রথমদিন হয়রানি ও জরিমানার শিকার হন দৈনিক মানবজমিনের ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ। পেশাগত কাজে বের হয়ে মামলা হওয়ার বিষয়টি তিনি তার ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেন। তাতে বলা হয়, ‘বুঝলাম না ডাক্তার ও সাংবাদিকদের গাড়িতে কেন পুলিশ মামলা দিচ্ছে, এগুলো তো জরুরি সেবা। আমাকেও চার হাজার টাকার মামলা দিল। আমি পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ছবি তুলতে আগারগাঁওয়ে পুলিশের চেকপোস্টের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। ক্যামেরা বের করার আগেই আমাকে চার হাজার টাকার মামলা ধরিয়ে দেওয়া হলো।
জানতে চাইলে জীবন আহমেদ গতকাল বলেন, মামলার সময় আমার মোটরসাইকেলের কাগজপত্র জব্দ করেছে পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জরিমানার বিষয়টি দেখা হবে, তাদের সঙ্গে যেন দেখা করে।
লকডাউন বা চলাচলে বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন গতকালও পেশাগত দায়িত্বে বের হওয়া গণমাধ্যমকর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘ঢাকা পোস্ট ডটকম’ এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ রিপন। তিনি বলেন, আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম। এমন সময় এক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে কিছু না বলে মোবাইল ফোনটি নিয়ে যান। যদিও পরে ফোনটি ফেরত দেওয়া হয়।
এছাড়া গত দুদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর, শাহবাগ ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় আরও বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এমন হয়রানির শিকার হয়েছেন। বুধবার দৈনিক ঢাকা টাইমসের রিপোর্টার আলামিন রাজুকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। তাকে দীর্ঘক্ষণ পুলিশের জেরার মুখে ফাঁড়িতে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে হয়।
আলামিন রাজু গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি পত্রিকার জন্য পুলিশের চেকপোস্ট এলাকায় তাদের দায়িত্ব পালনের দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করছিলেন। কিন্তু সেখানে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে বাধা দিয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি মোবাইল হাতছাড়া করতে না চাইলে তাকে গালিগালাজ করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে ঢাকা উদ্যানের পুলিশ ফাঁড়িতে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবরুদ্ধ করে রাখে।
বিধিনিষেধের আওতামুক্ত দায়িত্বপালনে রাস্তায় বের হওয়া বিভিন্ন পেশাজীবীদের হয়রানি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় যাদের আওতামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মীরাও রয়েছেন। তাই তাদের পেশাগত কাজে বাধা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেউ হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।