রেজিস্ট্রেশন করছে না ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
করোনার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে না হাওরাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। নবম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী এবার রেজিস্ট্রেশন করছে না। শিক্ষকরা বাড়ি গিয়ে দেখেছেন, এসব শিক্ষার্থীর হয় বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে, নতুবা গার্মেন্টে চাকরি নিয়ে বাড়ি ছেড়েছে। কেউ কেউ পরিবারসহ বাড়ি ছেড়েছে। অনেকে বাড়ি থাকলেও আর্থিক অনটনের কারণে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না।
জেলার ধর্মপাশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র তালুকদার বলেন, 'গেল ১৭ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি অনেক পরিবর্তিত হয়ে গেছে। অষ্টম থেকে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৯০ জন শিক্ষার্থী। সোমবার পর্যন্ত ৬১ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে যোগাযোগ করেও অন্যদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিভাবকরা অস্বীকার করলেও আমরা জেনেছি বাল্যবিয়ে দেওয়া হয়েছে ৪ জন শিক্ষার্থীকে। অন্যদের বেশিরভাগই গার্মেন্টে কাজ করতে চলে গেছে। কেউ কেউ বাড়িতে থাকলেও পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে।'
তাহিরপুরের আনোয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল চন্দ্র দে বলেন, 'চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়েছি। তারপরও শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে আনা যাচ্ছে না। ১২১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮২ জন রেজিস্ট্রেশন করেছে। আর কেউ করবে বলে মনে হচ্ছে না। কাজ নিয়ে রাজধানী ঢাকা বা বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চলে গেছে এরা।'
শাল্লা উপজেলার সাউদেরশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হরিপদ দাস জানান, 'নবম শ্রেণির ২৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২১৯ জন রেজিস্ট্রেশন করেছে। অন্যরা আসবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জেনেছি পাঁচটি মেয়ের বাল্যবিয়ে হয়েছে। অনেকে গার্মেন্টে কাজ নিয়ে ঢাকায় চলে গেছে।'
মধ্যনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ভীষণ ক্ষতি হয়েছে শিক্ষায়। অনেক চেষ্টা করে ৬৬ জনের মধ্যে ৪৮ জনের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মচারী ফোরামের জেলা সভাপতি ও জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোদাচ্ছির আলম সুবল জানান জেলার সিংহভাগ স্কুলের একই চিত্র। ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী ২০২১-এর নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করছে না। তার স্কুুলের ১২৮ জনের মধ্যে ৪৩ জন এখনও রেজিস্ট্রেশন করেনি। তিনি আরও জানান, রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ২১০ টাকা। অর্থের অভাবে শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না, তা নয়। বরং এলাকা ছাড়ার কারণেই শিক্ষার্থীদের পাওয়া যাচ্ছে না।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনায় মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসছে না, রেজিস্ট্রেশনও করছে না। এদের জন্য এই মুহূর্তে তেমন কিছু করাও সম্ভব নয়।