দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
রেজিস্ট্রার কামরুলের পদত্যাগের দাবিতে অচলাবস্থা পবিপ্রবিতে
নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালীঃ দক্ষিণ অঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ রিজেন্ট বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থাকলেও সব কিছু ছাপিয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একক আধিপত্য ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের।
নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কামরুল ইসলামের রয়েছে নিজস্ব বলয়, আর এসব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও অনেকটা কামরুলের কল কব্জার কাছে ধরা। আর এভাবে গত কয়েক বছরে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছেন কামরুল ইসলাম। তবে এবার কামরুলের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আর এ কারণে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ১০ দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতি ও ধর্মঘট চলছে। ফলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকটা স্থবির হয়ে পরেছে।
দুপুরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখ যায়, প্রশাসনিক ভবনের সামনে শত শত কর্মকর্তা কর্মচারীরা বসে আছেন। তাদের পেছনে বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গানো রয়েছে। সড়কের সামনে দুই দিকে দুটি মাইক লাগানো হয়েছে। একের পর এক কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখছেন। আর গত কয়েকদিন থেকে নিজ নিজ দপ্তরের কাজ না করে এভাবেই আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তবে আন্দোলন কারীরা যখন বক্তব্য রাখছে সে সময় ভিসি এবং রেজিস্ট্রার কাউকেই তাদের কক্ষে পাওয়া যায়নি।
এর আগে সোমবার পবিপ্রবির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের কাছে আন্দোলনরত কর্মকর্তা কর্মচারীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য লিখিত চিঠিও দিয়েছে। এতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কর্মচারী পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু কর্মচারী পরিষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যৌথভাবে স্বাক্ষর করেন।
লিখিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতামতের ও দাবির ভিত্তিতে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টারের কর্মে অদক্ষতা এবং দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত নয় এমন প্রতীয়মান হওয়ায় ড. কামরুল ইসলামকে রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) থেকে দ্রুত অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ ছাড়াও কর্মকর্তা কর্মচারীদের দাবিগুলো হচ্ছে, অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে আপডেট কমিটির প্রতিবেদন রিজেন্ট বোর্ডের সভায় অনুমোদন, সহকারী রেজিস্ট্রার পদের স্কেল ষষ্ঠ গ্রেড এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদের স্কেল চতুর্থ গ্রেডে উন্নীত করা, অর্গানোগ্রাম কমিটিতে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি রাখা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজদের প্রশাসনের বাইরে বদলি, প্রতি অর্থবছরে তিনটি বাছাই বোর্ড এবং তিনটি রিজেন্ট বোর্ডের সভা আহ্বান করা।
অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজ কুরুনী বলেন,‘ বিশ্ববিদ্যালয় দুর্নীতি পরায়ণ একটি সিন্ডিকেট সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ে প্রধান অন্তরায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান রেজিস্ট্রার একজন দুর্নীতি পরায়ণ মানুষ। তিনি নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ সব অনিয়ম অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করছেন। ধীরে ধীরে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিনত করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না এই রেজিস্ট্রারের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, ‘আমাদের দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ না নিলে আমরা ভিসি মহোদয়কেও অবরুদ্ধ করতে পিছপা হবো না। যে কোনো মূল্যে আমাদের ন্যায্য দাবি আদায় করে নেব।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পবিপ্রবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নই। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত মাত্র চারজন শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, যা শতভাগ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ছাত্রদের নেয়া হয়েছে। এছাড়া টেন্ডার কমিটিতে আমি সদস্য নই, সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে আমার কোনো প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই।’
তবে কেন আপনার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, এমন প্রশ্নের জবাবে কামরুল বলেন, ‘কর্মকর্তা কর্মচারীদের নেতৃবৃন্দরা তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করতে পেরে এখন আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত জানান, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান মিলবে বলে মনে করেন তিনি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৯/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
এই বিভাগের আরও খবর