রিটে আটকা পরে আছে নন-ক্যাডার নিয়োগ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
৪০ তম বিসিএস যখন পাঁচ বছরেও সম্পন্ন হচ্ছিল না, ঠিক সেই সময়ে সুপারিশ করার পূর্ব মুহূর্তে ২২ জনের একটি রিটের কারণে আটকা পরে যায় নন-ক্যাডারের ৪৪৭৮ টি পদের নিয়োগ। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের যেহেতু প্রচুর লোকবলের দরকার, নন-ক্যাডার নিয়োগ আটকে যাওয়ায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নানাবিধ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনকে পরিচালনা করতে হলে এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের প্রচুর লোকবলের দরকার। কিন্ত রিটের কারণে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ৪০৩ টি গুরুত্বপূর্ণ পদ আটকা পড়ে গিয়েছে। এছাড়াও ভূমি এবং কারিগরি সেক্টরে প্রচুর লোকবল এর অভাব। ৪০ তম বিসিএস থেকে ভূমির ১৩৪২ টি ও কারিগরির প্রায় ১৩৮০ টি পদের নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্ত সেই পদগুলিও একটি রিটের কারণে সরকার নিয়োগ দিতে পারছে না।
৪০ তম বিসিএস ক্যাডার সুপারিশ করার নয় মাস পর বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) তাদের নন-ক্যাডার বিধিমালা সংশোধনের জন্য উদ্যোগ নেয় এবং দীর্ঘ ছয় মাস পর ১৪ জুন ২০২৩ সালে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০২৩ চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এরপরই ১৯ জুন ২০২৩ পিএসসি থেকে ৪০ তম বিসিএস নন-ক্যাডারের নতুন সার্কুলার জারি হয়। ২০ জুন থেকে ৫ জুলাই চাকরি প্রত্যাশীরা আবেদন সম্পন্ন করে।
আবেদন সম্পন্ন করার পর যখন সকলেই রেজাল্টের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল ঠিক সেই সময় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ১৫৬ টি পদ চলে যাওয়ার কারণে সিভিলের ২২ জন চাকরি প্রত্যাশী হুট করে হাইকোর্টে রিট করে দেয়, যদিও পিএসসির সার্কুলারে স্পষ্ট উল্লেখ আছে পিএসসি চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চাহিদা মোতাবেক কোন মন্ত্রণালয়/ বিভাগের পদ অথবা পদসংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে। পরবর্তীতে এই রিটের কারণে আদালত থেকে ছয় মাসের স্টে অর্ডার চলে আসে যার কারণে পিএসসি নন-ক্যাডারের নিয়োগ দিতে পারছে না। বর্তমানে রিটের বিষয়টি আপিল ডিভিশনের ফুল বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে ৪০ তম বিসিএস নন-ক্যাডার চাকরি প্রত্যাশীরা চাকরিতে সুপারিশের জন্য হাহাকার করছে এবং আদালতে তারা রেজাল্টের দাবির জন্য ইন্টারভেনর পার্টি হিসেবে ২১ তারিখ আদালতে উপস্থিত থাকবে বলে জানা গিয়েছে।
নূর মোহাম্মদ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-০৭ সেশনের এক চাকরি প্রত্যাশীর সাথে কথা বলে জানা যায় যে, সরকারি চাকরির আবেদনের সময়সীমার শেষ সময়ে তিনি ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এখন তার বয়স ৩৫ বছর। নন-ক্যাডারের সুপারিশের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তিনি এখন ক্লান্ত। ৩৫ বছর বয়সে এসেও পিএসসি থেকে সুপারিশ পাননি। চাকরিতে জয়েন করতে করতে তার বয়স যদি ৩৬, ৩৭ এর কোঠায় এসে পৌঁছায় তখন তিনি চাকরিতে যোগদান করবেন নাকি চাকরি থেকে কখন অবসর নিবেন সে কথা ভাববেন, ফুল পেনশন তো তিনি কখনো পাবেনই না। এই সময়ে সিভিলের ২২ জনের রিট সত্যিই দুঃখজনক। দ্রুত নিয়োগ সুপারিশের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছেন।
রিমি ও তাহের নামে এক দম্পতি ৪০ তম বিসিএস নন-ক্যাডার। দুইজনেরই চাকরি নেই এবং তাদের চাকরির বয়সও অনেক আগেই শেষ। ৪০ তম বিসিএস নন-ক্যাডার তাদের একমাত্র অবলম্বন। যেই মুহূর্তে ৪০ নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ পাওয়ার কথা ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে সিভিলের রিট তাদের পুরো পরিবারকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই মুহূর্তে তারা সামাজিকভাবে হেও প্রতিপন্ন হচ্ছেন। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর সামনে তারা তাদের মুখ পর্যন্ত দেখাতে পারছেন না। পুরোপুরি সমাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা ৪০ তম বিসিএস নন-ক্যাডারের দিকে চাতক পাখির মত তাকিয়ে আছেন।
২০১৮ সালে যখন ৩৬ তম বিসিএস নন-ক্যাডারের সুপারিশ করা হয় ও ৩৭তম বিসিএস ভাইবা চলে, সেই সময়ে সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখ ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার সার্কুলার প্রকাশিত হয়। সার্কুলার প্রকাশের তারিখ হতে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর ৩০ মার্চ ২০২২ তারিখে ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয় এবং যারা পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশ পাইনি এরকম ৮১৬৬ জনকে নন-ক্যাডারের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়।
এরই মধ্যে নন-ক্যাডার চাকরি প্রত্যাশীরা দুই দুইবার আবেদন করে ফেলে কিন্ত বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) এখন পর্যন্ত ৪০ নন-ক্যাডার চাকরি প্রত্যাশীদের চাকরিতে সুপারিশ করতে পারেনি। এতে সাধারণ নন-ক্যাডার চাকরি প্রত্যাশীরা হতাশার মধ্যে দিন যাপন করছে। উল্লেখ্য, নন-ক্যাডারে প্রথম আবেদন করার শেষ তারিখ ছিল ১৬ জুন ২০২২। এরপর ২০২৩ সালের জুন মাসে পিএসসি ৪০ নন-ক্যাডারের নতুন সার্কুলার জারি করে এবং চাকরি প্রত্যাশীরা পুনরায় চয়েজ লিস্ট পূরণের মাধ্যমে নন-ক্যাডারে আবেদন সম্পন্ন করে।
২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বেকার সংখ্যা তিন কোটি। অনেক আগে থেকেই দেশের চাকরি বাজার অনিশ্চয়তার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেকারত্ব দূরীকরণে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন যেটা আমাদের দেশের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এমনই একটি পদক্ষেপ হচ্ছে বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগ। একটি রিটের কারণে নন-ক্যাডার নিয়োগ যদি থমকে যায় সেটা দেশ ও জনগণের উন্নয়নের পথে বিশাল বাঁধা দাঁড়াবে এবং রাষ্ট্রের জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হতে বাঁধাগ্রস্ত হবে। এই কারণে নন-ক্যাডারের জননী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আশু দৃষ্টি আকর্ষণের অনুরোধে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ৬৩৮৯ জন নন-ক্যাডার চাকরিপ্রত্যাশী।