সংসদ ভে‌ঙে তফ‌সিল ঘোষণা ও সকল নিবন্ধিত রাজ‌নৈ‌তিক দ‌লের মতাম‌তের ভিত্তিতে গ‌ঠিত নির্বাচনকালীর জাতীয় সরকা‌রের অধী‌নে ভোট আ‌য়োজনসহ ১৫ দফা দা‌বি জা‌নি‌য়ে‌ছে চর‌মোনাই‌ পী‌রসাহেবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আ‌ন্দোল‌ন বাংলাদেশ।

সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দল‌টির জাতীয় সম্মেলন থে‌কে রাষ্ট্র সংস্কা‌রে ১৯ দফা প্রস্তাবও করে‌ছে স্থানীয় সরকা‌রের বি‌ভিন্ন নির্বাচ‌নে উ‌ল্লেখ‌যোগ্য ভোট পে‌য়ে আ‌লোচনায় আসা দল‌টি। চর‌মোনাই‌য়ের পীর মুফ‌তি সৈয়দ মুহম্মদ রেজাউল করীম ইসলামী আ‌ন্দোল‌নের আ‌মির প‌দে এবং অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ মহাস‌চিব প‌দে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছেন।

স‌স্মেল‌নে আওয়ামী লী‌গের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ সৈয়দ ইবরাহীম (বীর প্রতীক), এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী, বি‌রোধীদলীয় নেতার রাজ‌নৈতিক স‌চিব গোলাম মসীহ, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এএমএম আলম, গণ অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খানসহ বি‌ভিন্ন দ‌লের প্রতি‌নি‌ধিরা ছি‌লেন। সম্মেলনে ইসলামী আ‌ন্দোল‌নের ১১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, ৭৩ সদস্যের নির্বাহী পরিষদ এবং ২২ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়।

রাষ্ট্র সংস্কা‌রে গণ‌ভো‌টে নতুন সং‌বিধান, জনপ্রশাসন সংস্কার, নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও ন্যায়পাল বিভাগকে পরস্পর থেকে স্বাধীন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা, নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার, সংখ্যালঘুর নিরাপত্তাসহ ১৯ দফা প্রস্তাব করা হ‌য়ে‌ছে।

দলটি বলছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো ৫২ বছর হতে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, আমাদের জনপ্রশাসন আজও  উপনিবেশিক কাঠামো, চরিত্র ও কর্মধারার উত্তরাধিকার বহন করে চলছে। প্রশাসনকে দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে ‘জনতার সেবক দর্শন’ এ খোলাফায়ে রাশেদার আদর্শে গড়ে তোলা হবে।

অর্থ খাত, অর্থনীতি, শিল্পায়ন, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সব দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে, খাতগুলোকে শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক করতে এবং স্বনির্ভর এনার্জি সেক্টর নির্মাণে জাতীয় কাউন্সিল গঠন করা। উৎপাদক কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনা তথা পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণসহ পুরো ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করা। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা। দেশের শিল্প খাত ও মজুরি খাতকে বিশ্লেষণ করে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে সর্বাধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। দেশের স্বাস্থ্য খাত ভঙ্গুর ও দুর্নীতিগ্রস্ত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে উন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা, জেলা স্তরে আধুনিক চিকিৎসা উপকরণসহ উন্নত হাসপাতাল নির্মাণ, সবার জন্য সুলভে চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা, রোগের উৎস নিয়ন্ত্রণ, রোগ গবেষণাসহ সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার অধীনে আনা।  নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বন্ধ এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর স্বাধীনতা রক্ষায় ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য উদ্ভুত নীতির অধীনে নারীর অবস্থান ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করা।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনে করে, কোনও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব নয়। সেজন্য ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করেছে। সব দলের সমন্বয়ে একটি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করে দলটি।

স‌ম্মেল‌নে সারা‌দেশ থে‌কে আসা ইসলামী আ‌ন্দোল‌নের কাউ‌ন্সিলরা যোগ দেন। বক্তৃতা ক‌রেন দল‌টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, আব্দুল আঊয়াল প্রমুখ।