রায় বহাল থাকলেও ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগে উদ্যোগ নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২৫০০ এর অধিক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে রায় বহাল থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের নিয়োগের কোনো দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
জানা গেছে, চলতি বছরের গত ২ এপ্রিল ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২৫০০ এর অধিক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের এই রিভিউ রায় দেন সুপ্রিকোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে ২০২২ সালের পহেলা জুন তাঁদের নিয়োগ দিতে রায় দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ে এনটিআরসিএ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে এই রিভিউ রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে সরাসরি নিয়োগের লক্ষে পুরো বাংলাদেশ থেকে শুন্য পদ সংগ্রহ করে শুন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ৷ সে মোতাবেক প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা শেষে মোট ১৭,২৫৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ন হয় ৷ নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর পূর্ব মুহুর্তে এনটিআরসিএ প্রথম থেকে দ্বাদশ তম নিবন্ধনধারীরা নিয়োগ বঞ্চিত হবার আশঙ্কায় একটি মামলা দায়ের করে৷ এনটিআরসিএ শুন্যপদের বিপরীতে ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিলেও আদলতের নির্দেশের কারণে ১৩ তমদের নিয়োগ না দিয়ে একটি মেধাতালিকা করে ৩য় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ প্রদান করে। যাতে করে ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীরা নিয়োগ বঞ্চিত হয় ৷ নিয়োগ বঞ্চিত ১৩তম ২২০৭ নিবন্ধনধারী সংক্ষুব্দ হয়ে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে ৷ শুনানি শেষে আদালত ২২০৭ জনকে নিয়োগের নির্দেশ দেয় ৷ আদালত ২২০৭ জনকে নিয়োগের নির্দেশের বিপরীতে আপিল করলেও সেই আপিলে নিয়োগের নির্দেশ বহাল থাকে। তৃতীয় গনবিজ্ঞপ্তিতে আদালতের রায়ের কারণে রিটকারী ২২০৭ জনের পোষ্ট ব্লক করে নিজ উপজেলায় ১ টি মাত্র আবেদনের মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করে ৷ কিন্তু রিটের বাইরে থাকা ১৩ তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেয়নি ৷ একই ব্যাচ উত্তীর্ণ ২২০৭ জনকে দিলেও অন্যরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়। ফলে বাধ্য হয়ে নিয়োগ বঞ্চিত ১৩ তম ২৫০০ এর অধিক নিবন্ধনধারীরা সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে কয়েকটি রিট দায়ের করেন। শুনানী শেষে ২০২২ সালের পহেলা জুন তাঁদের নিয়োগ দিতে রায় দেয় হাইকোর্ট। এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২ এপ্রিল ২০২৩ সালে আপিলেও বহাল থাকে রায়টি।
তবে এই রায় নিয়ে জটিলতায় পরে এনটিআরসিএ। কর্মকর্তারা কেউ মনে করে রায়টি তাঁদের পক্ষেই আছে। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী বয়স ৩৫ এর অধিক নিয়োগের সুযোগ নেই। অন্যদিকে চূড়ান্ত রায়ের ১৪ পৃষ্ঠার শুরুতে ১৩ তম নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের তারিখ (প্রকাশ ২০১৭ সালের ৪, জুন) থেকে সনদের মেয়াদ পরবর্তী ৩ বছর। সে হিসেবে ১৩ তম নিবন্ধনধারীদের সনদের মেয়াদ জুন ২০২০ এর পর আর কার্যকারিতা থাকবে না। অর্থ্যাৎ ১৩ তম নিবন্ধনধারীরা জুন ২০২০ এর পরে আর নিয়োগ পাওয়ার দাবি করতে পারে না। এই বিষয়টিকেই এনটিআরসিএ মনে করছে রায় তাঁদের পক্ষে আছে। তবে ৩২ পৃষ্ঠার চুড়ান্ত ঐ রায়ের একই (১৪) পৃষ্ঠায় প্রধান বিচারপতি এটাও যোগ করেছেন যে এই সনদের তিন বছর মেয়াদের মধ্যে এনটিআরসিএ ১৩ তম রিটকারীদের শুন্যপদে নিয়োগ দিতে না পারার ব্যর্থতার জন্য দায়ী আর যে অদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে এনটিআরসিএ নিয়োগ কার্যক্রমে সমস্যা মোকাবিলা করছে তেমনি ১৩ তম সকল রিটাকারীরাও তিন বছরে শুন্য পদে নিয়োগ পাওয়াটা তাদের প্রাপ্য ছিল সেটা না পেয়ে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। যার প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ১৩ তম নিবন্ধন্ধারীদের হাইকোর্টের রায়ে কোন ভুল পাইনি অর্থ্যাৎ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
নিয়োগের বাইরে থাকা ১৩ তম নিবন্ধনধারীরা জানান, ২২০৭ জনের নিয়োগ হলে আমরা এনটিআরসিএ'র অফিসে যোগাযোগ করলে ২২০৭ জনের নিয়োগের আদেশের মামলাটি পুনরায় আপিল করে এনটিআরসিএ। ২২০৭ জনের মামলাটি রিভিউতে থাকে। এদিকে নিয়োগবঞ্চিত ২৫০০ এর অধিক নিবন্ধনধারীদের মামলাটিকেও এনটিআরসিএ আপিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে রিভিউতে থাকা ২২০৭ জনের মামলাটির সাথে ২৫০০ এর অধিক নিবন্ধনধারীদের মামলাটি ট্যাগ করে রায় দেন আপিল বিভাগ। এতে ২২০৭ জনের নিয়োগের রায়টিও বহাল থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগের বাইরে থাকা ১৩ তম নিবন্ধনধারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম মনিরুজ্জামান আসাদ শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, ২৫০০ এর অধিক ১৩ তম নিবন্ধনধারীদের পক্ষে রায় এটা শতভাগ। তিনি বলেন, ২২০৭ জন ১৩ তম নিবন্ধনধারীদের যে নিয়োগ হয়েছে এই রায়টা তারই আলোকে। তাদের মামলা নম্বর ৩৪৩। ২৫০০ এর অধিক ১৩ তম নিবন্ধনধারীদের রায়টাও এরই আলোকে।
এনটিআরসিএ'র কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করছেন রায়টা এনটিআরসিএ'র পক্ষেই জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা ভুল ভাবে হয়ত তারা ভাবছেন। হাইকোর্টের কোন রায় যদি সুপ্রিমকোর্টের আপিল ডিভিশন বহাল রাখে তাহলে এই রায় তো রিট পিটিশনারদের পক্ষে। রায়ের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ টা পড়লেই পরিষ্কার বোঝা যাবে। যে ২২০৭ জনকে নিয়োগের যে রায় এটাও তারই আলোকে অর্থ্যাৎ রিট পিটশনার ২৫০০ এর অধিক নিবন্ধনধারীদেরও নিয়োগ দিতে হবে। রায়ে এটা সুস্পষ্ট।
এনটিআরসিএ'র পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। তবে তাকে একাধিকবার কল দিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএ'র কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর কয়েকজন কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে বলেন, এই রায়টা নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যেই দ্বিধাবিভক্তি আছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনজীবীর মতামত নিব। উচ্চ আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে এনটিআরসিএর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
উল্লেখ্য, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিও শূন্যপদে নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ ২০১৬ সালে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিবন্ধন পরীক্ষায় তিন ধাপে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিত পরীক্ষা শেষে চূড়ান্তভাবে মোট ১৭ হাজার ২৫৪ জন উত্তীর্ণ হলেও এনটিআরসিএ তাদের সবাইকে নিয়োগ দেয়নি। নিয়োগ না পেয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে একাংশ (২ হাজার ২০৭ জন) হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। তাদের রিটের বিপরীতে হাইকোর্ট ডিভিশন নিবন্ধিতদের নিয়োগের পক্ষে রায় দিলে তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু যারা রিট করেননি তারা নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/১০/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়