রামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে
এবার ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির কর্মসূচি দিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। গত বুধবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী গোলাম মোস্তফা শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল ভাঙচুর ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের পর মামলা রেকর্ড না করা এবং কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার দুপুরে হাসপাতালের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
হাসপাতাল ভাঙচুর, প্রশাসনিক কাজে বাধা দেওয়া, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত করা ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
এর আগে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে মানববন্ধন হয়। এতে অংশ নেন হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা, হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, ডা. খলিলুর রহমান, ডা. আজিজুল হক আজাদ প্রমুখ।
কর্মসূচিতে রামেক হাসপাতাল ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ইমরান হোসেন ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা হামলাকারীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কাজে ফিরেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলা রেকর্ড হয়নি। এমনকি কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। তাই পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ এ মানববন্ধন থেকেই আমরা আগামী ৭২ ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। এই তিন দিনের প্রতিদিন আমরা আমাদের দাবি নিয়ে হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।
এ আগে গত বুধবার রাতে রাবির হাবিবুর রহমান হলের তৃতীয় ব্লকের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন রাবির শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর করেন। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে তাদের মারামারির ঘটনাও ঘটে।
এরপর রাবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসে রাত ২টায় তারা ক্যাম্পাসে ফেরেন। তবে রাত সাড়ে ১১টা থেকে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি শুরু করেন। তারা রাবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
পরদিন বৃহস্পতিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামা ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন। পরে শুক্রবার সকাল থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কাজে ফেরেন। কিন্তু আসামি গ্রেফতারে তারা ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে রাখেন। এ সময় শেষ হওয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে গেলেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এদিকে শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ও রাবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগে রাবি কর্তৃপক্ষও আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে প্রশাসনের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।