রাবির বিদ্যুতে চলে পাড়ার অটোরিকশা
রাজশাহীঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চলছে একটি অবৈধ অটোরিকশা চার্জের গ্যারেজ। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০টি অটো চার্জ হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন অবৈধভাবে ব্যবহার হচ্ছে ২০০ ইউনিট। যার মূল্য প্রায় মাসে অর্ধ লাখ টাকা। এ ছাড়াও গ্যারেজে নিয়মিত বসে জুয়া ও মাদকের আড্ডা। গ্যারেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের ব্যক্তিদের অনুমতি নিয়েই তারা বিদ্যুতের এই লাইন চালাচ্ছেন। তবে বিষয়টি অবগত নন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১০ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচন্ডীর হাসমত আলী বাবু নামের একজন ওই গ্যারেজ চালু করেন। শুরুতে বৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে ওই গ্যারেজ চলত। তবে মালিক হাসমত মারা গেলে গ্যারেজের মূল দায়িত্ব নেয় ‘বঙ্গমাতা স্মৃতি সংসদ’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠন। এক বছর বেশি সময় ধরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ দিয়ে গ্যারেজ চালাচ্ছে। যার পরিচালনায় রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজারসংলগ্ন ‘বঙ্গমাতা স্মৃতি সংসদ’-এর পাশেই ওই গ্যারেজ। গ্যারেজে বেশ কয়েকটি ব্যাটারিচালিত অটো ও রিকশা চার্জ হচ্ছে। সেখানে দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন ওই গ্যারেজে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি করে অটো চার্জ দেওয়া হয়।
একাধিক গ্যারেজ মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি অটো চার্জ হতে প্রায় ৯ থেকে ১০ ইউনিটের মতো বিদ্যুতের প্রয়োজন। সে অনুসারে গ্যারেজে প্রায় প্রতিদিন ২০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুতের ব্যবহার হয়। যার মাসিক মূল্য প্রায় ৫৫ হাজার ও বছরে সাড়ে ৬ লাখের বেশি টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে ওই ক্লাব ঘরে ও গ্যারেজে বসে জুয়ার আসর। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অবাধে মাদক সেবনও চলে।’
এসব বিষয়ে বঙ্গমাতা স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মচারী তৌহিদুল আলম বলেন, ‘আগে আমরা বিদ্যুতের মিটার নিয়েই চালাচ্ছিলাম কিন্তু তাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের ব্যক্তিদের অনুমতি নিয়েই আমরা বিদ্যুতের লাইন নিয়েছি। আমাদের স্থানীয় কিছু বেকার ছেলে-পেলের কর্মসংস্থানের জন্য এই কাজ করছি আমরা।’
তবে মাদক ও জুয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাবে এসব কিছু হয় না। যারা এসব বলছে তারা মিথ্যা বলছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা বহুবার ওইখানের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব দেখিয়ে বাধা দিয়েছে। এ ছাড়া এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে তারা দেখে নেবে বলে জানায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টা জানে তবুও তারা কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আমরা দ্রুত ওই গ্যারেজের বিষয়ে খোঁজ নেব। এমন হলে দ্রুতই আমরা সেটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করব।’
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সব দোকান দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিক। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি জানা নেই। তবে সেটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই। যারা আমার নাম বলছে, তারা সত্য বলেনি।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৭/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়