রাজশাহীর শিক্ষকদের বর্তমান হালচাল
মো: হায়দার আলী গোদাগাড়ী রাজশাহী।।
শিক্ষা জাতীর মেরুদন্ড, যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতী তত উন্নত, আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে আমি তোমাদেরকে আর্দশ জাতি উপহার দিব। যে শিক্ষা নিয়ে নিয়ে এত কথা সে শিক্ষা ব্যবস্থা আজ করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত। তবু বর্তমান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই সংসদ টিভিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছেন। শিক্ষার্থী শিক্ষক শিক্ষিকাগণকেও সে পাঠ দেখার নির্দেশাও দিয়েছেন। প্রদত্ত শিক্ষকদের বাড়ীর কাজগুলি শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বিষয় শিক্ষকদের নিকট জমা দিবেন বিষয় শিক্ষক সেগুলি মূল্যায়ন করে নম্বর প্রদান করবেন সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টা চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এই সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা থাকেন মহাব্যস্ত-এমন ব্যস্ততা এখন আর নেই। করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শিক্ষকরা বই পড়ে কিংবা জাতীয়-আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নিউজ দেখে, মাস্ক খাবার বিতরণ, ফেসবুক, আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করে সময় কাটাচ্ছেন রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকার শিক্ষক।
রাজশাহীর কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক নেতা, শিক্ষকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা জানা গেছে।
১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটিতে ছিল সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছুটি ঘোষণা করেন ৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
সাধারণ ছুটিতে কীভাবে সময় কাটছে এমন প্রশ্নে রাজশাহীর কোট একাডেমির প্রধান শিক্ষক শফিকুল জানান, মাঝে মধ্যে প্রতিষ্ঠানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা দেখি, এই পরিস্থিতিতে বাসায় অনেকগুলো বই নিয়ে এসেছি। সেগুলো পড়ে শেষ করছি। বেশির ভাগ সময় বই পড়ে কেটে যায় সময়। প্রতিদিনের সংবাদ পত্র ও টিভি নিউজ দেখি নিয়মিত।
গুলরাজবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লাইলা খাতুন বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষেরা খুবই বিপদে আছে। এখন বৃত্তবানরা এগিয়ে আসতে হবে। আমি আমার এলাকায় শিক্ষকদের খেটে খাওয়া মানুষের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে আহবান করছি। নিজে যতটুকু পারছি গরীবদের সাহায্য করচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের সময় দিচ্ছি, নামাজ ও কুরআন পড়চ্ছি, এভাবে সময় পার হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মেয়ে পুরোপুরি নিয়ম মেনে ঘরেই আছে । নিজের পড়ালেখা করছে ।
, গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হায়দার আলী বলেন, এর আগে এধরনের ছুটি পাইনি খুব বোরিং লাগছে , শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে খারাপ লাগছে, সব কিছু মেনে নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে মোবাইলে কথা বলছি, সংসদ টিভিতে ক্লাস গুলি দেখতে এবং প্রদত্ত বাড়ীর কাজগুলি করে স্কুলের বিষয়ভিক্তিক স্যার জমা দিতে হবে সেটা বলা হয়েছে।
মাঝে মাঝে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছি, বেশী বেশী খবর দেখচ্ছি, বই পড়ছি, গরীবদের সাহায্য করছি, সরকারের পাশাপাশি আমাদের রাজশাহী ১ আসনের এমপি আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল গরীবদের খাবারের জন্য নিজে ১লাখ টাকা দিয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম সরকারের মাধ্যমে তহবিল গঠন করেছেন সেখানে যে যেভাবে দান করবেন করতে পারেন ওখানে দান করার জন্য শিক্ষকদের ফোন করে বলা হচ্ছে, নামাজসহ ধর্মীয় কাজ বেশী বেশী করা হচ্ছে। আল্লাহকে বেশী বেশীস্মরণ করচ্ছি, দান করছি, মানুষ ফোন করে দেশের অবস্থা, সমাজের, এলাকার অবস্থা, করোনা অবস্থা জানতে যাচ্ছেন, এঅবস্থা কতদিন থাকবে, আমরা গরীব আমাদের কি হবে, মাঝে মধ্যে ছাত্রী, অভিভাবক রিং করছেন, ফেসবুক চালাচ্ছি, প্রধান মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এলাকার মানুষের উৎকন্ঠা কমে গেছে।
পরিবারের সদস্যদের এর আগে এভাবে এতবেশী সময় দিতে পারিনি এজন্য তারাও খুশি, ছোট খাট পারিবারিক কাজগুলি করা হচ্ছে । প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক, সাবেক শিক্ষক নেতা, হুজুরদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হচ্ছ। এলাকার ডে লেবার, গরীব, অটোচালক, টলি চালকদেরও কিছু কিছু খোঁজ নেয়া হচ্ছে। বেশী বেশী নিউজ করার সুযোগ পাচ্ছি। এ ভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।
গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রী কলেজের উপাধ্যক্ষ ও মাটিকাটা ইউনিয়ন উপনির্বাচনের আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: শহিদুল করিম শিবলী জানান, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে ২টি কর্মসূচিতে ছিলাম, মাস্ক ও চাউল বিতরণ করেছি, জাতীয় ও আন্তজাতিক খবর দেখে বই পড়ে, সময় পার করচ্ছি। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে ১০০ টি একেবারে গরীর দুস্থ পরিবারকে নিজ অর্থায়নে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ৫ কেজি আলু বিতরণ করবো ইনসাল্লাহ।
একই কলেজের সরকারী অধ্যাপক তোফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, জাতীয় আন্তজাতিক পরিমন্ডলের সংবাদ দেখচ্ছি, কলেজের আমার বিষয়ের সিলেবাসগুলি শেষ করচ্ছি, গরীব দুস্থ মানুষদের খোঁজ খবর নিচ্ছি, তাদেরকে সাহায্য করচ্ছি করচ্ছি অন্যদের সাহায্য করতে উৎসাহিত করচ্ছি। আল্লাহর নিকট এ দুয়া করি যেন আমাদেরকে করোনা বিপদ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্ত করেন।
গোগ্রাম আর্দশ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: শহিদুল ইসলাম বলন, নিম্নমধ্যবিত্ত যারা কোথাও কোনো সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারেনা ইজ্জতের ভয়ে কিন্তু পেটে ক্ষুধা। বেঁচে থাকার আকুলতা সবার মধ্যে। আমরা এখনো বেতনের সাংবাদ পাইনি কবে বেতন হয় এনিয়ে সমস্যায় আছি।
বাসুদেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমান বলেন,জাতির এই কঠিন ক্রান্তিলগ্নে একজন শিক্ষক হিসেবে সরকার ঘোষিত ছুটিতে শুধু ঘরে আবদ্ধ না থেকে পাশ্ববর্তী মানুষকে “করোনা” এর ভয়াবহতা তুলে ধরে সচেতনতামূলক কাজ করছি। মানুষকে সাহায্য করছি। পরিবারের সাথে সময় কাটাচ্ছি।
রাজাবাড়ি হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক মোঃ ককামরুজ্জামান বলেন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা ও জনসাধারণকে মাস্ক পরা ও বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে পরামর্শ দিচ্ছি । এছাড়া, মোবাইলসহ অন্যান্য মাধ্যমে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করে বাড়িতে বসে পড়াশোনার নির্দেশনা দিচ্ছি এবং সংসদ টিভিতে প্রচারিত নির্ধারিত ক্লাসগুলো দেখে ঘরে বসে পাঠগ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি।
রাজাবাড়ী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো:সেলীম রেজা বলেন, করোনা ভাইরাসের শিক্ষা ব্যবস্থার দারুণ ক্ষতি হচ্ছে, তারপরেও জরুরী প্রয়োজনে কলেজে যাচ্ছি, দেশ বিদেশের সাংবাদ দেখচ্ছি, শিক্ষা সংক্রান্ত ওয়েব সাইড ভিজটি করচ্ছি। বিষয় ভিক্তিক বই, পরিবারকে সময় দিচ্ছি এভাবে সময় পার হয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহীর সিসিবিভিও কর্মকর্তা যিনি প্রতিষ্ঠান গুলিতে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে থাকেন তিনি বলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সমাজের বাড়ী বাড়ী গিয়ে কোরনা সম্পর্কে সচেতন করচ্ছি, পরিবারের সদস্যদের সময় দিচ্ছি, ছেলেদের লেখা পড়া করাচ্ছি, নামাজ পড়চ্ছি, টিভি দেখচ্ছি এভাবে সময় কেটে যাচ্ছে।
মাটিকাটা আদর্শ কলেজের উপাধ্যক্ষ ও গোগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের এমপি সাহেবের পরামার্শে এলাকার গরীব, দুস্থ, দিনমজুর তালিকা করে তাদেরকে ১০ কেজি করে চাউল দিয়েচ্ছি, পরিষদ ভবণ ও এর চারপাশে জীবানু নাশক স্প্রে করেছি, মানুষকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করচ্ছি, টিভিতে সংবাদ দেখচ্ছি এভাবে সময কাটাচ্ছি।
হুজরাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাও. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তার কাছে একজন শিক্ষক হিসেবে প্রার্থনা তিনি যেনো এই মহামারি থেকে আল্লাহ আমাদের আমাদের রক্ষা করেন। আমরা দ্রুত যেনো আমাদের স্কুল আঙিনায় ফিরে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ফিরতে পারি। সব স্কুল আঙিনা যেনো দ্রুত নিষ্পাপ শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়।