রঙিন করে তুলেছে স্কুল শিক্ষক দম্পতির কমলা বাগান
লালমণিরহাটঃ কমলা রঙে রঙিন করে তুলেছে স্কুল শিক্ষক দম্পতির কমলা বাগান। বাগনে এলেই কাঁচা-পাকা কমলার রংঙে চোখ জুড়ে যায়, ভরে যায় মন। কমলার মুহু-মুহু গন্ধে ডালে ডালে উড়ছে মৌমাছি আর প্রজাপতি। চায়না জাতের কমলা ছোট হলেও প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় দুলছে কাঁচা-পাকা কমলা। চায়না কমলা আকারে ছোট হলেও স্বাদে খুব মিষ্টি। শিক্ষকতার পাশাপাশি কমলা বাগান করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ওই দম্পতি। পেয়েছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারের খেতি। বাগানটি এক নজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে আসছে ফল প্রেমীরা। ভালো ফলন দেখে কমলা চাষে উৎসাহী হচ্ছে তারা।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সারডুবি গ্রামের শিক্ষক দম্পতি খলিলুর রহমান ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার বেলে-দোয়াশ মাটিতে চায়না, দার্জিলিং ও নাগপুরি জাতের কমলা চাষ করে সফল হয়েছেন। এছাড়াও তাদের একটি নার্সারি আছে যেখানে বিভিন্ন জাতের কমলার চারা, সুপারি, আম, কাঠাল, লিচু ইত্যাদি চারা পাওয়া যায়। ওই দম্পতি প্রতি মাসে নার্সারি ও কমলা বাগান থেকে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা আয় করে।
শিক্ষক দম্পতি, খলিলুর রহমান উপজেলার মিলন বাজার মোজাম্মেল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মজুমদার পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
সারিবদ্ধ প্রতিটি কমলা গাছে ৪শ থেকে ৫শতাধিক চায়না জাতের কমলা ধরেছে। স্থানীয়দের কাছে সমতল মাটিতে কমলা চাষ করে বাম্পার ফলনে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ওই শিক্ষক দম্পতি। বর্তমানে স্থানীয়দের কাছে তারা আদর্শ শিক্ষক ও আদর্শ কৃষক হিসাবে পরিচিত। তাদের কমলা চাষে সাফল্যে উদ্বুদ্ধু হয়ে অনেকে কমলা চারা কেনার জন্য তাদের নার্সারিতে আসছেন। আবার কেউ পারামর্শ নিচ্ছেন।
জানা গেছে, ২০১১ সালে এক বিঘা জমিতে দার্জিলিং জাতের ১ শত ৫২টি কমলার চারা লাগান শিক্ষক দম্পতি খলিলুর রহমান ও ফাতেমা খাতুন মজুমদার। কমলার বাগান করার তিন থেকে চার বছরের মাঝেই ফল দেয়া শুরু হয়। সেই কমলা বাজারজাত করে ব্যাপক লাভবান হয় ওই দম্পতি। দূরদূরান্ত থেকে কমলা বাগান দেখতে আসে স্থানীয় লোকজন। কমলা চাষে সফল হয়ে আলোড়ন তৈরি করেন। এ সময় কমলা চাষে সাফল্য অর্জন করায় ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন শিক্ষক ফাতেমা খাতুন মজুমদার।
এরপর থেকে কমলা চাষে উৎসাহী হয়ে উপজেলা কৃষি অফিস ও বিভিন্ন এলাকার কমলা চাষির পরামর্শ নিয়ে এক একর জমিতে চায়না জাতের কমলা চাষ শুরু করে।
বর্তমানে ১০০টি গাছে দুই বছরের মাথায় থোকায় থোকায় কমলা ধরেছে। সুস্বাদু চায়না জাতের ছোট ছোট কাঁচা-পাকা কমলার রংঙ্গে রঙ্গিন হয়েছে শিক্ষক দম্পতি বাগান। বর্তমান বাজারে চায়না জাতের কমলার চাহিদা বাড়ছে। এছাড়াও শিক্ষক দম্পতি একটি নার্সারি আছে বিভিন্ন জাতের কমলা চারা, সুপারি চারা, আম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ঔষধী গাছের চারা দিয়ে একটি সমৃদ্ধ নার্সারি গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে ওই শিক্ষক দম্পতি প্রতি মাসে নার্সারি ও কমলা বাগান থেকে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা আয় করেন।
শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, গাছের সাথে সখ্য থেকেই প্রথম একটি নার্সারি তৈরি করি। পরে আমার স্ত্রী দার্জিলিং জাতের কমলার বাগান করে। বাগান করার তিন থেকে চার বছরের মাথায় ফল দেয়া শুরু করে। এতে করে আমাদের কমলা বাগানের সাফল্য ছড়িয়ে পড়ে। সফলতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পান আমার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন মজুমদার। সেই থেকে আমরা কমলা চাষে উৎসাহী হয়ে কম খরচে বেশি লাভজনক চায়না জাতের কমলা বাগান তৈরি করি। এখন কমলা ফল দেয়া শুরু করেছে। ফলন ভালো হয়েছে। বাজার দর অনুযায়ী ভালো দাম পাচ্ছি।
শিক্ষক ফাতেমা খাতুন মজুমদার বলেন, আমার কৃষি কাজ ভালো লাগে। তাই শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিতে জড়িয়ে পড়েছি। কমলা বাগান করে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছি। এর পর থেকে কমলা চাষে আমাদের আগ্রহ বেড়ে যায়। সেই থেকে চায়না জাতের কমলা বাগান তৈরি করি। ফলন ভালো হয়েছে মুনাফাও ভালো পাচ্ছি। এখন আমারা নার্সারি ও কমলা বাগান থেকে প্রতি মাসে ১ থেকে ২ লাখ টাকা আয় করি।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৯/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়