যেকারণে শিক্ষকদের আন্দোলন আলোর মুখ দেখে না!
সিমরান জামান।।
সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য কমানো নিয়ে শিক্ষকদের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এই বৈষম্য কমানোর বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোন সাড়া পাননি শিক্ষকরা।
এ কারণে ধীরে ধীরে শিক্ষকদের ক্ষোভ বেড়েছে ।এ কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা নয়, আরো বড় দাবি শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ চান তারা। তাদের দাবি, তাদের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করতে হবে।
এই দাবি নিয়ে শিক্ষকরা বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। আন্দোলনত শিক্ষকরা বারবার বলেছেন, দাবি আদায় না করে স্কুলে ফিরে যাবো না। তারা স্কুলে তালা ঝুলিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আন্দোলনে এসেছেন।
বিশেষ করে মফস্বল ও গ্রামের অনেক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করেছেন দফায়দফা। এই কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের অংশগ্রহণও বেড়েছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষক নেতারা। জাতীয়করণের বিষয়টি যাচাইবাছাইয়ের জন্য দুটি কমিটি গঠনও হয়েছে।
সরকারি শিক্ষকরা তাদের মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া পান। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ১ হাজার টাকা। এত কম টাকা দিয়ে কী হয় ? এই বাড়ি ভাড়া একটি যৌক্তিক হারে বৃদ্ধি করা দরকার। সেটা ২০ বা ২৫ শতাংশ বা আরো কিছু বেশি হতে পারে। আর সরকারি শিক্ষকরা উত্সব ভাতা পান মূল বেতনের শতভাগ।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পান মাত্র ২০ ভাগ। এই ভাতা এমপিওভুক্তদের ক্ষেত্রেও শতভাগ করা প্রয়োজন। এছাড়া অবসরকালীন সুবিধা আরো বৃদ্ধি ও সহজে পাওয়ার ঘোষণা দিলে সাধারণ শিক্ষকরা আপাতত আশ্বস্ত হবে। আন্দোলেনর মাঠ ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবে। শূন্য হাতে শিক্ষকদের বাড়ি ফেরানো যাবে না। এসব দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরণ অনশনে যাবেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা তাদের দাবিতে অনড় থাকতে চেয়েছেন।
শিক্ষকদের বাগে আনতে না পেরে ক্রমেই হার্ডলাইনে গিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি। মাউশি অনুমোদন ছাড়াই স্কুলে অনুপস্থিত থাকা ৩৪ জন শিক্ষককে শোকজ দিয়েছেন। অবশেষে শিক্ষকরা আন্দোলন ছেড়ে চলে গেছেন। শিক্ষক নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২০ হাজারের বেশি।
এর মধ্যে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি। বাকিগুলো বেসরকারি। মোট শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো। এই সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা দেশের ২% শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে সকল সুবিধা ভোগ করে আর বেসরকারি শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৮% এমপিওভুক্ত।এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে বেতনের মূল অংশসহ কিছু ভাতা পান। তবে সার্বিকভাবে তাদের সুযোগ-সুবিধা খুবই কম।
সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা একই সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পড়ান। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা এক নয়। এমপিওভুক্ত বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সরকার থেকে মূল বেতন পুরোটাই পান। কিন্তু বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল ফারাক।
সরকারি শিক্ষকেরা মূল বেতনের ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া পান। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা পান মাত্র এক হাজার টাকা। সরকারি শিক্ষকেরা উৎসব ভাতা পান মূল বেতনের সমান। বেসরকারি শিক্ষকেরা পান মাত্র ২৫ শতাংশ। চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয় মাত্র ৫০০ টাকা। তাদের কোন পেনশন নেই, বদলি নেই।
সব মিলিয়ে দেশে প্রায় ৪০ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে পাঁচ লাখেরও বেশি শিক্ষক একই ধরনের বৈষম্য নিয়ে আছেন। এই বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। তবে সাধারণ শিক্ষকরা মনে করেন শিক্ষক সংগঠনগুলোর বেশিরভাগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত । তারা সত্যিকার অর্থে সাধারন শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা চান না।
তারা আন্দোলন করেন নিজের স্বার্থ ও টাকাপয়সা ইনকামের জন্য। এছাড়াও তাদের একতার অভাবকেও অনেক শিক্ষক মনে করেন।যতদিন কর্মরত শিক্ষকরা শিক্ষক সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে না আসবে ততদিন শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া অধরা থেকে যাবে এমনটি মনে করেন বেশিরভাগ শিক্ষক।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৯/০৩/২০২৪