যুগ্ম সচিব পদোন্নতিতে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়
অনলাইন ডেস্ক।।
গত ৩১ আগস্ট সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) প্রথম বৈঠকের মধ্য দিয়ে উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার এসএসবির সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আজ রোববার অনুষ্ঠিত হবে আরেকটি বৈঠক। শিগগির আরো দু-একটি বৈঠক শেষে পদোন্নতির তালিকা চূড়ান্ত করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে যোগ্য কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে নিজেদের পদোন্নতি নিশ্চিত করতে মাঠে নেমেছেন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার পদোন্নতির জন্য ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০ ব্যাচে যোগদান করেছিলেন ২৯৭ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে ২৬৮ জন উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। এখন এ ব্যাচে যুগ্ম সচিব হওয়ার যোগ্য রয়েছেন ২৪৮ জন।
এবারের পদোন্নতিতে উপসচিব পদমর্যাদার ৫৫৩ জন যোগ্য কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত (লেফট আউটসহ) ৩২৪ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছেন ৩৮ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ১৯১ জন।
উপসচিব থেকে যুগ্ম সচিবে পদোন্নতি দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটি বৈঠক করে এসএসবি। বৈঠকে প্রত্যেকের কর্মজীবনের সমস্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনায় আসছে। এসএসবির আর দু-একটি বৈঠক শেষে পদোন্নতির জন্য তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। পদোন্নতিকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যারা রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী তারা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। অন্য দিকে যেসব কর্মকর্তা মেধাবী কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব শক্তিশালী না, তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এসএসবির সদস্যদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের দিয়ে তদবির করাচ্ছেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন প্রশাসন ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা সুরাইয়া আখতার জাহান। কর্মজীবনে তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে আধা সরকারিপত্র দিয়ে অনুরোধ করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। একইভাবে তিনি পদোন্নতির জন্য ডিও দিয়েছেন তার মন্ত্রণালয়ের আরেক উপসচিব মীর আলমগীর হোসেনের জন্য। আনসার ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের এই কর্মকর্তা তার একান্ত সচিবের অনুপস্থিতিতে একান্ত সচিবের দায়িত্বও পালন করেন বলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে দেয়া চিঠিতে উল্লেখ করেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও প্রশাসন ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য তার পক্ষে ডিও দিয়েছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান। ডিও লেটারে তিনি লিখেছেন, সাখাওয়াত হোসেন তার ব্যক্তিগত পরিচিত। তার পাঁচ বোন এবং তিন ভাই সকলে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল মানুষ। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য তিনি একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন মন্ত্রী। তাই তার পদোন্নতি দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান।
পরিকল্পনা বিভাগে উপসচিব পদে কর্মরত প্রশাসন ক্যাডারের ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। তিনি মাঠপ্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতার সাথে। তাই তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিলে দক্ষতার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এ জন্য ওই কর্মকর্তার যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করেন তিনি। একইভাবে তার মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আরেক উপসচিব খলিল আহমেদের এ পদোন্নতির জন্যও সুপারিশ করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে কোনো মন্ত্রী বা এমপি তদবির করতে পারেন না। সরকারি বিধিতে তদবির নিষিদ্ধ। এরপরও যারা করেন, তারা গুরুতর অন্যায় করেন।সুত্র নয়া দিগন্ত