যশোরের নারীরা সুঁই-সুতোর বুননে ভাগ্য ফেরাচ্ছেন
যশোরের নারীরা সুঁই আর সুতোর বুননে ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছেন। পরিবার সামলিয়ে অবসরে মনের ক্যানভাসে রঙ দিয়ে নকশিকাঁথা বুনে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন। সময়ের হাত ঘুরে বর্তমানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পরিণত হয়েছে এই কাজ।
সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে যশোরের নারীরা সূঁচের ফোঁড়ে ফোঁড়ে কাঁথার উপর ফুটিয়ে তুলছেন নানা রঙের ফুল, পাখি, লতা, পাতাসহ বিভিন্ন কারুকাজ। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই নকশি কাঁথাকে তারা দিয়েছেন বাণিজ্যিকরূপ।
বেশ কয়েক বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র, মধ্যবিত্ত এমনকি শিক্ষিত নারীরাও কারুশিল্পকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলেছেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। কেবল নকশিকাঁথাই নয় নারীরা তৈরি করছেন বাহারি রঙ আর নানা ডিজাইনের সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর, সোফার কুশন, পাপোশ, ওয়ালম্যাট, পাঞ্জাবি, ব্যাগসহ নানা পোশাক।
তাদের মধ্যে এমনি একজন উদ্যোক্তা ফাতেমা জোহরা। তিনি বলেন, কাজ শুরু করি একটা মেশিন নিয়ে। বর্তমানে তিন চারশো কর্মচারী নিয়ে কাজ করছি।
যশোরের পারভিন আক্তার শুরুতে দুই চার পিস তৈরি করতেন। তবে এখন হাজার হাজার পিস তৈরি করতে হয় তাকে। বেচা বিক্রিও ভালো ছিল, তবে করোনায় কিছু থমকে আছে বলেও জানান তিনি।
এ সব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ঘরে বসে থাকা শত শত বেকার নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে নিজেদের গড়ে তুলেছেন স্বাবলম্বী হিসেবে।
হস্তশিল্পের এই কাজে এখন নারীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়তি অর্থ উপার্জন করে পরিবারকে সাহায্য করছেন অনেকেই। এক শিক্ষার্থী বলেন, পড়াশুনার পাশাপাশি হাতে সিলাইয়ের কাজ করি। কাজটার পরিমাণ হিসেবে টাকা দেয়। এই টাকা দিয়ে পরিবারকে সাহায্য করি।
তবে করোনার প্রভাব চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই শিল্পকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য র্দীঘমেয়াদী সরকারি প্রণোদনার দাবি জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত নারী উদ্যোক্তা তনুজা রহমান মায়া। তিনি বলেন, সরকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছেন সেই প্যাকেজটি একবছর মেয়াদী না করে, যদি ৩ বছর মেয়াদী করে তাহলে হয়তো আমরা খুব সহজেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
গৃহবধূদের নিপুণ ও নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এসব পণ্যের চাহিদা থাকায় এই শিল্পকে ঘিরে যশোরে বর্তমানে কাজ করছেন ছোট-বড় দেড় শতাধিক নারী উদ্যোক্তা।।
শিক্ষাবার্তা/এসআই