যথানিয়েমে সব চলে তবু কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ে ?
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কওমি মাদরাসা ছাড়া দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ছুটি বৃদ্ধির তথ্য জানানো হয়।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর ১৬ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত ছুটি ছিল। সেই ছুটি এবার ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ল।
করোনা মহামারির মধ্যেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী। গত (১১ জানুয়ারি) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে গাজীপুর সদরের এক শিক্ষার্থীর পিতা মো. আব্দুল কাইয়ুম সরকারের পক্ষে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে,, করোনার কারণে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিশ দিয়েছে সরকার। দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষার্থীরা এ সময়ে বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, টিভি দেখে সময় ব্যয় করছে। এছাড়া মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে খারাপ অভ্যাস গড়ে উঠছে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, খুব শিগগিরই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। তাই আগামী ১৬ জানুয়ারির পর আর কালবিলম্ব না করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। নয়তো শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এছাড়াও গত বছরের ১লা নভেম্বর দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবী জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজ পরিষদ বাংলাদেশ(বিকেএসসিপিবি)।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সদস্য সচিব মো. আনিছুর রহমান মাস্টার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পুরো বিশ্বের মতো আমরাও দিশেহারা। কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। গত ১৭ই মার্চ থেকে সরকারি আদেশ মোতাবেক সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজ আছে। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ লক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারী কর্মরত আছেন এবং প্রায় এক কোটিরও অধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করে আসছে এই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজগুলো নানা কারণে অর্থনৈতিক দূরাবস্থার শিকার। আমাদের শিক্ষক, কর্মচারীগণ সামান্য বেতনে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনার এই মহামারীতে এই সকল শিক্ষক কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছে। কারণ ছাত্র/ছাত্রীর টিউশন ফি হলো প্রতিষ্ঠানের এক মাত্র আয়ের উৎস যা গত ১৭ই মার্চ থেকে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।এছাড়া কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজগুলো বেশির ভাগ ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত। এই মহাদূর্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজগুলোর বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে না পারলে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। যার ফলে শিক্ষাক্ষেত্র এক বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, ১লা নভেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজগুলো খোলার অনুমতি প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোকে রক্ষার জন্য এই শিক্ষা খাতকে “শিক্ষা উদ্যোক্তা” ঘোষণা করা হোক। সরকার যেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে সহজশর্তে ও সল্প সুদে ব্যাংক ঋণ –এর ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর জন্য একটি পৃথক বোর্ড গঠন করা অথবা একটি রেগুলেটরি কমিশন গঠন করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণের দাবি জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের আহব্বায়ক লায়ন মো. কাবুল মিয়া, যুগ্ম আহব্বায়ক হরেরাম দাস, মো. মোস্তাফিজুর রহমান মুজাহিদুল, মো. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সদস্য মুহাম্মদ আলাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় সদস্য আলমগীর কবির প্রমুখ।
সংশ্লিষ্টদের একটাই প্রশ্ন যথানিয়েমে সব চলে তবু কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি বাড়ে ?