মোড়েলগঞ্জে একটি বিদ্যালয়ে বদলির তদবিরে শূন্য হয়ে পড়েছে শিক্ষক
এম.পলাশ শরীফ,মোড়েলগঞ্জ প্রতিনিধি ।।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে এস বড়পরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। রয়েছে শিক্ষক সংস্কট, বদলির তদবিরে শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়েছে এখন স্কুলটি। পরিত্যাক্ত ভবনে অফিস কক্ষ। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের তদারকি না থাকায় কাঙ্খিত শিক্ষা পাচ্ছেনা শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টি দেখে মনে হয় এটি বিদ্যালয় নয় যেন পুড়ে যাওয়া কঙ্কাল। ভবনটি ধসে পড়ে যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সরেজমিনে দেখা যায়, খাউলিয়া ইউনিয়নের ১৬৭নং এস বড়পড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫০ সালে স্থাপিত। ১৯৯৪ সালে ৪ কক্ষ বিশিষ্ট ভবন নির্মান করা হয়। একটি কক্ষ ব্যবহৃত হচ্ছে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ হিসেবে। বাকি ৩টি শ্রেণী কক্ষ। ইতোপূর্বে ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা হলেও ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনও চলছে অফিসিয়াল কার্যক্রম। ভবনটির বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খসে খসে পড়ে বেরিয়ে গেছে রড়। দাড়িয়ে আছে জরার্জীণ ভবনের অবকাঠামো। শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় খেলাধুলা ও বিনোদন করে থাকে ওই ঝুঁিকপূর্ন কক্ষগুলাতে। বিদ্যালয়ে নেই কোন খেলার মাঠ, নেই খাবার পানির ব্যবস্থা। দুর্ঘটনার আশংকার মধ্যে রয়েছে শিক্ষক সহ ছাত্র-ছাত্রীরা।
স্কুলটিতে শিক্ষক পদ রয়েছে ৫টি। নিয়ম বর্হিভূত তদবিরে বদলি হতে হতে বর্তমানে শিক্ষক রয়েছেন ২ জন। অন্য দিকে শিক্ষক শূন্যতায় দিন দিন হৃাস পাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে সহকারি শিক্ষক মিনতি রানী ও রওশন জাহান অন্যত্র বদলি হয়ে যাওযায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা হয় মাত্র ১ জন শিক্ষক দিয়ে।
যে কারনে একমাত্র প্রধান শিক্ষক হনুফা আক্তার শিক্ষার্থীদের একাই পাঠদান করে আসছেন। সর্বশেষ ২৭ জুন ২০১৯ বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ডেপুটেশনে শিমুল রানী মিস্ত্রীকে ওই বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে দেওয়া হয়। বর্তমানে ২ জন শিক্ষক দ্বারাই চলছে এ বিদ্যালয়টি। ভবন পরিত্যাক্ত থাকায় শ্রেণীকক্ষের বিকল্প হিসেবে ২০১৬ সালের ক্ষুদ্র মেরামতের আওতায় ১ লাখ টাকা দিয়ে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিনশেট ঘর করে সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান চালানো হচ্ছে। বর্তমানে টিনশেট ঘরটিও অত্যান্ত নাজুক। বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৫৯ জন। বুধবার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে ২য় শিফটের ক্লাশ চলছে। ৫ম শ্রেণীতে ১১জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিতি মাত্র ৩ জন। ৪র্থ শ্রেণীতে ৮ জনে উপস্থিতি ২ জন, ৩য় শ্রেণীতে ১৪ জনে উপস্থিতি ৪ জন, ৩টি শ্রেণীতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩ জনের মধ্যে ৯ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত রয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ঝুঁকিপূর্ন স্কুল ভবনে সন্তানদের পাঠিয়ে সার্বক্ষনিক দুঃচিন্তায় থাকতে হয়। নতুন স্কুল ভবন হবে দীর্ঘদিন ধরে এমন কথা শুনে আসলেও তার কোন বাস্তবায়ন দেখছি না। এ বিদ্যালয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদচারনা না ঘটায় বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা তুলে ধরতে পারেননি অভিভাবকবৃন্দ।
অভিভাবক ও মা সমাবেশ সর্ম্পকে নেই তাদের কোন ধারনা। বিষয়টি তাদের কাছে নতুন মনে হয়। সাংবাদকর্মীদের কাছে এ ধরনের অনেক প্রশ্ন করছিলো অভিভাবকরা।
কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হনুফা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে তিনি বিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্ব থেকেই এ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প ব্যবস্থায় ভবনের সামনে টিনশেটের ঘরে শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করাচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা একাধিকবার লিখিত আকারে নতুন ভবনের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদনও করেছেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. রেজাউল ইসলাম জানান, নতুন ভবনের জন্য ইতোপূর্বে ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে সরেজমিনে এসে দেখে গেছেন ৪ বারের মত সয়েল টেষ্ট হয়েছে। নতুন ভবনের তালিকায় রয়েছে বিদ্যালয়টি। তবে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার বলেও অদ্যাবধি কোন সুফল মেলেনি।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাষ্টারের সহকারি শিক্ষা অফিসার এস.এম জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টিতে একাধিকবার পরির্দশনে গিয়ে পরিদর্শন বইয়ে নোট দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম ও সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা হয়নি।
এ সর্ম্পকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আশিষ কুমার নন্দী বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে বাগেরহাট জেলা কর্মকর্তার লিখিত নির্দেশে ডেপুটেশনে একজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। পর্যাক্রমে আরো শিক্ষক দেওয়া হবে। নতুন ভবনের বিষয়ে তিনি বলেন, সয়েল টেষ্ট হয়েছে শিগ্রই ভবনের কাজ শুরু করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। #