মেয়েদের দ্রুত স্কুলে ফেরানোর নিশ্চয়তা তালেবানের
নিউজ ডেস্ক।।
আফগানিস্তানে মেয়েরা খুব শিগগির পড়াশোনায় ফিরবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে তালেবান। আফগান শিক্ষা মন্ত্রণালয় দ্রুতই মেয়েদের সেকেন্ডারি স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফেরার সময় ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা। আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কারি সায়িদ খোসতি রোববার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমার জানামতে, সব বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল খুব শিগগির খুলে দেয়া হবে। সব মেয়েই স্কুলে যাবে এবং নারীরা শিক্ষকতার চাকরি ফিরে পাবে।
গত আগস্টে তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর কিশোরীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত তাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। তবে সব শ্রেণীর ছেলে এবং প্রাথমিকের মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু বয়সে কুলনামূলক বড় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তালেবান হয়তো তাদের প্রয়োগে শাসন ব্যবস্থাই ফিরিয়ে আনতে চলেছে। যদিও কাবুলের নতুন শাসকদের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে, উপযুক্ত পর্দা ব্যবস্থা নিশ্চিত হলেই আফগান মেয়েরা স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবে।
কাবুল থেকে আল জাজিরার সংবাদদাতা বলেছেন, সেকেন্ডারি স্কুলের সব মেয়ে ও তাদের নারী শিক্ষকদের খুব শিগগির স্কুলে ফেরা নিশ্চিত, এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন কারি সায়িদ খোসতি। তিনি বলেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তালেবানের মুখে আমরা এ ধরনের কথা শুনে আসছি। হ্যাঁ, তারা (মেয়ে) ফিরছে। কিন্তু এতে সময় লাগবে। আর অবশ্যই, এটি অনেক মেয়ের ওপর প্রভাব ফেলছে। মেয়েরা স্কুলে ফিরতে ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়।
তুরস্ককে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান : আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তুরস্ককে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন আহ্বান জানিয়েছেন তালেবান সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনায় গত বৃহস্পতিবার তুরস্ক সফরে যান আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরে তুর্কি পররাষ্টুমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন তিনি।
এ সময় তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলেন দুই নেতা। কথা হয় যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা আফগান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ফেরত পাওয়ার বিষয়েও। আনাদোলু এজেন্সির সঙ্গে আলাপকালে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক আফগানিস্তানে বিনিয়োগ, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন, সংস্কার ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমির খান মুত্তাকি বলেন, তালেবান সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাবুলে ক্ষমতার পালাবদলের পর যুক্তরাষ্ট্রে জমা থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ জব্দ করে বাইডেন প্রশাসন। ওয়াশিংটনের এমন পদক্ষেপের সমালোচনা করেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে আফগানিস্তানের রিজার্ভ আটকে দিয়েছে সেটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দেশ কাবুলকে এই অর্থ দিয়েছিল। সেটি কেন আটকে দেয়া হয়েছে? আফগানদের অপরাধ কী? তারা কী করেছে?
আগামী মাস থেকেই পোলিও টিকাদান : আফগানিস্তানে আগামী মাস থেকে পোলিও টিকাদান কর্মসূচি পালিত হবে। এখনও পর্যন্ত টিকা না নেয়া লাখ লাখ আফগান শিশুর সুরক্ষায় এই কর্মসূচি পরিচালনা করা হবে। সোমবার জাতিসঙ্ঘের এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয় বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ৮ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া এ কর্মসূচিতে পূর্ণ সহায়তা দেবে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার। তালেবান নেতৃত্বের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ। স্বাস্থ্য খাতে আফগানিস্তানের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলোর মোকাবিলায় এরই মধ্যে তালেবান সরকার ও জাতিসঙ্ঘ প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
তিন বছরেরও বেশি সময় পর আফগানিস্তানে এই পোলিও টিকাদান কর্মসূচি পালিত হতে যাচ্ছে। দেশটির সব শিশুকে এই টিকার আওতায় নিয়ে আসার টার্গেট নিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। আফগানিস্তানে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি হার্ভে লুডোভিচ ডি লাইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের পোলিও নির্মূলের প্রচেষ্টায় বিশাল অগ্রগতি এনে দেবে।’ তিনি বলেন, পোলিও সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের জন্য আফগানিস্তানের প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি শিশুকে টিকা দিতে হবে এবং আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে আমরা এই কাজটিই করতে যাচ্ছি।
শিয়াদের টার্গেটের হুমকি আইএসের : শিয়া মুসলিমদের সব জায়গায় টার্গেট করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএসআইএস)। তাদের সাপ্তাহিক প্রকাশনা আল নাবাতে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছে এএনআই। আল নাবাতে বিশেষ করে আফগানিস্তানের শিয়াদের কথা বলা হয়েছে। তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা চালানো হবে। বাগদাদ থেকে খোরাসান পর্যন্ত সব জায়গায় এ হামলা চলবে বলে উল্লেখ করা হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে শান্তি বজায় রাখার বড় চ্যালেঞ্জ এখন আইএস। কিছুদিন আগেই তারা জুমার নামাজের সময় দুইটি শিয়া মসজিদে হামলা চালিয়েছে। এতে শতাধিক শিয়া মুসল্লি হতাহত হয়েছে।