মেহেরপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের আনন্দ উল্লাস
মেহেরপুর প্রতিনিধি ।।
মহামারি করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার সকালে খুলেছে মেহেরপুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে মাস্ক পরে বের হয়েছে বিদ্যালয়ে আসার জন্য। শিক্ষার্থীদের হারিয়ে যাওয়া উল্লাস আবার নতুন করে ফিরে পেয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করেছেন শিক্ষকরা।
অনেক শিক্ষার্থী হাল ধরেছে সংসারের। যে কচি হাতে বই খাতা আর কলম ধরার কথা সেই হাতে অনেকেই ধরেছে ভ্যান কিংবা অটোগাড়ির হ্যান্ডেল। অনেকেই বেছে নিয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ নানান পেশা। কেউ বা শিকার হয়েছে বাল্য বিয়ের। তাদের ফিরে আসা ও শিক্ষামুখী করা নিয়ে অনেকেই রয়েছেন সংশয় ও শঙ্কা। তবে, কর্তৃপক্ষ বলছে ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।
মেহেরপুর জেলায় ৩০৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৮৮ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১২০ কেজি স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে ২৫এবং ১৫ টি কলেজ রয়েছে। এখানে অন্ততঃ দু’লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী পারিবারিক প্রয়োজনে নেমেছে রোজগারের পথে। কোমল মতি এসব যাদের বিদ্যালয়ে ফেরানোটাই এখন চ্যালেঞ্জ।
বিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীরা জানায়, আটকে পড়া পাখিদের মত বন্দি ছিলাম। আজকে স্কুলে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। তবে এই সময়ের মধ্যে আমাদের অনেক সহপাঠিদের হারাতে হয়েছে। আমরা তাদেরকেও স্কুলে পেতে চাই।
গাংনী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থী আমার সন্তানের মত। অনেক সন্তানরা আমার কাছ ছাড়া হয়েছিল। তাদের ফিরে পেয়ে আমাদের অনেক ভাল লাগছে। আমরাও দির্ঘদিন বিদ্যালয়ে না আসতে পেরে অলস কাঠিয়েছি। সকল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে বিদ্যালয়ে উপস্থিত নিশ্চিত করেছি।
শিক্ষার্থীরা বেশ আগ্রহ সহকারে বিদ্যালয়ে এসেছে। তবে অনেকেই আসেনি। হোম ভিজিটের মাধ্যমে তাদেরকে নিয়মিত করণ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাসার বলেন,করোনা সঙ্কটে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে তা অস্বীকারের উপায় নেই। আর এ ঝড় থেকে পরিবারকে রক্ষায় শিক্ষার্থীদের কেউ হয়েছে উপার্জনের খুঁটি। অনেক পরিবার সামান্য সচ্ছলতার মুখ দেখতে মেয়েকে বসিয়েছেন বাল্য বিয়ের পিঁড়িতে। প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝরে পড়ার সংখ্যা বেড়েছে। তবে তার পরিসংখ্যান বিদ্যালয় ও শিক্ষা অফিসে নেই। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে তাই এখনই তার হিসেব নেয়া সম্ভব হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শৈক্ষা অফিসার ভুপেশ রঞ্জন রায় বলেন, মহামারি করোনায় আমাদের আটকে পড়া শিশুদের উৎসব মুখর পরিবেশে এবং উল্লাসের সাথে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। অনেকেই অনেক কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়েছে। আমরা অভিভবকদের সাথে কথা বলে তাদের বিদ্যালয়ে ফিরে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাব।