মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ১২ শিক্ষক নিয়োগ: কোটি টাকার বাণিজ্য
ঝিনাইদহঃ মৃত মাদ্রাসা সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে একটি মাদ্রাসায় ১২ জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসা সুপার মো. ইয়ারুল হকের বিরুদ্ধে আমলী আদালতে একাধিক মামলাও হয়েছে। এরমধ্যে একটি মামলা করেছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও জমিদাতা মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে কনক মণ্ডল। গত ২৩শে নভেম্বর তিনি হরিণাকুণ্ডু আমলী আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক জেসমিন নাহার মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিনাইদহ সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে আগামী ২৮শে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
২০২২ সালের ৬ই জুলাই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে বর্তমান মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক হরিণাকুণ্ডু সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব ছেড়ে আর্বিভূত হন সুপার হিসেবে। তিনিসহ ১২ জন শিক্ষক দাবি করে বসেন প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খলিলুর রহমান তাদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে রাতারাতি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। সরজমিন মাদ্রাসায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া জুনিয়র মৌলভী শিক্ষক রাফেজা খাতুন, সহকারী মৌলভী শিক্ষক বাবলুর রশিদ ও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তারা নিজেদের নিয়োগ নিয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ দেখাতে পারেনি।
কোন পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় প্রশ্ন করা হলে তারা আধুনালুপ্ত ‘দৈনিক আজকের কাগজ’ পত্রিকার কথা বলেন। বন্ধ পত্রিকায় কীভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলো? জিজ্ঞাসা করা হলে বিষয়টি মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক জানেন বলে তারা জানান। এ ছাড়া নিয়োগ বোর্ড কোথায় হয়েছিল বা নিয়োগ বোর্ডে সরকারি কোন কোন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন তাও তারা বলতে পারেননি।
মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দপ্তরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মনজের আলী। তিনি জানান, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল এই ১০ বছর পর্যন্ত বর্তমান সুপার ইয়ারুল হক ছিল না। ১৬ বছর ধরে মাদ্রাসাটিতে চাকরি করছেন বিপ্লব হোসাইন নামে এক শিক্ষক। এমপিওভুক্তির পর তিনি নিয়োগ পেতে চারজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হকের কাছে ১০ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু তাকে চাকরি প্রদান করা হয়নি। টাকা নিয়েও চাকরি না দেয়ার কারণে তিনি ঝিনাইদহের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।
মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতির ছেলে ও আরেক মামলার বাদী কনক মণ্ডল জানান, সুপার ইয়ারুল হক দাবি করছেন তিনি ২০০৪ সালে যোগদান করেছেন। তিনি যে কতো বড় প্রতারক ও জালিয়াতি চক্রের হোতা তা শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ডের স্বাক্ষর যাচাই করলে বোঝা যাবে। ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে পারফলসি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন আকরাম হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী। তার রেজিস্ট্রেশন কার্ডে মাদ্রাসা প্রধান হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে তৎকালীন সুপার মোস্তাফিজুর রহমান টুটুলের। বর্তমান সুপার যদি ২০০৪ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করতেন তবে তো তার স্বাক্ষর থাকতো।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক জানান, তাদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান। কোথায় কবে নিয়োগ বোর্ড বসেছিল তা তার মনে নেই বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী জানান, নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছে। বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করে যে রিপোর্ট প্রদান করবে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা জানান, নিয়োগের বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে আমাকে লিখিতভাবে জানালে আমি মাদ্রাসা বোর্ডকে অবহিত করতে পারতাম। তিনি বলেন, বিষয়টি যেহেতু আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেহেতু আদালতই ফয়সালা দিবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়