মৃত্যুও মতো এতো স্নিগ্ধ, এতো গভীর সুন্দর আর কিছু নেই-হুমায়ুন ফরীদি
নিউজ ডেস্ক।।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অভিনয়জগতের এক উজ্জ্বল তারা। ২০১২ সালের এই দিনে মাত্র ৬০ বছর বয়সে সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন অগণিত মানুষের প্রিয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। গুণী এ তারকার মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের সময়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি...
‘এ মাটিতে জন্ম নেওয়া সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চির উজ্জ্বল অভিনেতা হলো হুমায়ুন ফরীদি।’ কথাটি বলেছিলেন অভিনেতা আল মনসুর। এটি কোনো অতিমূল্যায়ন নয়। হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় যারা দেখেছেন, তারা একবাক্যেই স্বীকার করেন, এত বড় মাপের শিল্পী সত্যিই এ মাটিতে জন্ম নেওয়া শিল্পীদের মধ্যে বিরল।
এ কথার প্রমাণ মেলে প্রয়াত নাট্যজন আতিকুল হক চৌধুরীর এক কথায়, ‘হুমায়ুন ফরীদির মতো শিল্পী যে কোনো দেশে জন্মাতে যুগ যুগ সময় লাগে, শতাধিক বছর লাগে। ও একজন ভার্সেটাইল শিল্পী। তাকে জিনিয়াসই বলা যায়।’ শক্তিমান এই অভিনেতাকে নিয়ে সংস্কৃতিজগতের প্রায় সবারই এমনটা অভিমত। অভিনেতা হিসেবে তিনি যেমন শক্তিমান, মানুষ হিসেবেও ছিলেন অনন্য।
১৯৫২ সালের ২৯ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন হুমায়ুন ফরীদি। দুই ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র ফরীদি নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯৭৬ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্যোৎসব আয়োজনেরও প্রধান সংগঠক ছিলেন ফরীদি। এ উৎসবের মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে তার ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ঢাকা থিয়েটারের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে একজন মেধাবী ও শক্তিমান নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে যে আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ফরীদি, তার সেই উচ্চতায় এ দেশের খুব কম মানুষই পৌঁছতে পেরেছেন।
হুমায়ুন ফরীদি মঞ্চ, টিভি ও সিনেমায় অভিনয় করে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নির্মাণে সক্ষম হয়েছিলেন। কয়েক দশকের কর্মময় জীবনে অসংখ্য বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ফরীদি অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে- ‘দহন’, ‘মাতৃত্ব’, ‘বিশ্ব প্রেমিক’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘ভ-’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আহা!’, ‘হুলিয়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘সন্ত্রাস’, ‘ব্যাচেলর’ প্রভৃতি। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘নীল নকশার সন্ধানে’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘কাছের মানুষ’ প্রভৃতি। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ নাটকে ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে ‘কান কাটা রমজান’ চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
মানুষ হুমায়ুন ফরীদি আশির দশকের শুরুতে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন। তার এ বিয়ে সে সময় সারাদেশে বেশ আলোচিত ছিল। পরে হুমায়ুন ফরীদি সংসার শুরু করেন অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর পর থেকে একাকী জীবন যাপন করে গেছেন তিনি। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে হুমায়ুন ফরীদি তার অভিনয় দিয়েই মুগ্ধ করে রেখেছিলেন অগুনতি দর্শক-সমালোচককে।