মুমিনের গুণাবলি যেমন হওয়া উচিত
রাশেদ নাইব।।
ঈমান মানে হচ্ছে বিশ্বাস আর মুমিন হলো বিশ্বাসী। তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত- এসব বিষয়ের প্রতি যে ব্যক্তি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে, ইসলামের পরিভাষায় তাকে মুমিন বলা হয়। এটি কোনো বংশীয়ভাবে প্রাপ্ত কোনো কিছু নয়। ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলার মাধ্যমে এই যোগ্যতা অর্জিত হয়।
ইসলাম মানে আনুগত্য আর মুমিন হলো অনুগত ব্যক্তি। মুমিন কেমন হবে, তার পরিচয় দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনো তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসেবে নিকৃষ্ট! আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সাথে তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন। এদের প্রতিদান হিসেবে দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহকারে; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসেবে তা কতই উৎকৃষ্ট!’ (সূরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩-৭৬)
পবিত্র কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা। যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী ও নম্র। যারা বাজে বা বেহুদা কথা কাজ থেকে দূরে থাকে। যারা তাজকিয়া বা পরিশুদ্ধির ব্যাপারে কর্মতৎপর হয় এবং যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। তবে তাদের স্ত্রীদের ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। তবে যদি কেউ তাদের ছাড়া অন্য কাউকে (যৌন ক্ষুধা মেটানোর জন্য) কামনা করে তবে তারা হবে সীমালঙ্ঘনকারী এবং যারা তাদের আমানতসমূহ ও ওয়াদাচুক্তির (অঙ্গীকার) রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং যারা তাদের সালাতসমূহ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে। তারাই (এসব গুণের অধিকারী) উত্তরাধিকার লাভ করবে তারা উত্তরাধিকার হিসেবে ফেরদাউস পাবে এবং সেখানে চিরদিন থাকবে’ (সূরা মুমিনুন : ১-১১)।
মুমিনের ব্যাপারে রাসূল সা:ও হাদিসে বর্ণনা দিয়েছেন। যার প্রতিফলন একমাত্র জান্নাত যেমন- আমি আবুজর রা:-এর কাছে আবেদন জানালাম, আমাকে এমন আমল বলে দিন, যেই আমল করলে বান্দা জান্নাতে যাবে? তিনি বললেন, এ বিষয়টি আমিও রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আবেদন করেছিলাম, তিনি জওয়াব দিয়েছেন, ‘যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে’। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নিশ্চয় ঈমানের সাথে কোনো আমল আছে? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তা থেকে কিছু পরিমাণে দান করবে।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, যদি এমন নিঃস্ব হয় যে, তার কিছুই নেই? তিনি বললেন, ‘মুখে সুন্দর কথা বলবে’। আমি বললাম, যদি কথা বলতে না পারে? তিনি বললেন, ‘তা হলে বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে’। আমি বললাম, যদি সে এমন দুর্বল হয় যে, তার কোনো ক্ষমতা নেই? তিনি বললেন, ‘তাহলে কর্মহীনকে কর্ম জুুগিয়ে দেবে’। আমি বললাম, সে নিজেই যদি কর্মহীন হয়? তখন রাসূল সা: আমার দিকে তাকালেন, বললেন, ‘তুমি যদি বলতে চাও যে, তোমার সঙ্গীর মধ্যে ভালো কোনো যোগ্যতাই নেই, তবে সে যেন অন্তত তার কষ্ট দেয়া থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে।’ তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্ললাহ! এ তো অনেক সহজ কথা! আল্লাহর রাসূল সা: বললেন, ‘ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যে বান্দাই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসবের কোনো একটির ওপর আমল করবে, কিয়ামতের দিন ওই আমল তাকে হাত ধরে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবে’ (সহিহ ইবনে হিব্বান)।
অপর এক হাদিসে রাসূল সা: বলেন, হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ভালোবাসা ও দয়ার প্রতীক। ওই ব্যক্তির মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই, যে কাউকে ভালোবাসে না এবং কারো ভালোবাসা পায় না’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)।
মুমিন হওয়ার জন্য সর্বাবস্থায় ইসলামের বিধান মেনে চলতে হবে। তা হলেই কেবল সম্ভব সাচ্চা মুমিন হওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে নিজের জান্নাত নিশ্চিত করা।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট