মুজিব বর্ষের উপহার হোক জাতীয়করণ
মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন ।।
এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবি এখন টক অফ দা কান্ট্রিতে পরিনত হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী জাতীয়করণ প্রত্যাশী মহাজোটের ব্যানারে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। তারা আশা করছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা মুজিব বর্ষে ই হবে।
বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি কোন দিন জাতীয়করণ করা হয় তবে তা এ সরকারই করবেন। বেসরকারি শিক্ষার উন্নয়নে এ সরকার যা করেছেন তা ইতিপূর্বে কেউ করতে পারেননি। সমগ্র শিক্ষা ব্যাবস্থা জাতীয়করণের সাহস বর্তমান সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনারই রয়েছে- এমন আরো বহু কথা আজ বেসরকারি শিক্ষকদের মুখে মুখে।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৫ শতাংশ দায়িত্ব পালন করে বেসরকারি শিক্ষকরা। অথচ সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে পার্থক্য আকাশ পাতাল। করোনার ভয়াল ছোবলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মকক্ষতি হয়ে গেছে।
সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। এহেন পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। অথচ এটা বেশ ব্যয়বহুল। অল্প বেতনে চাকরি করা বেসরকারি শিক্ষকদের পক্ষে এটা চালিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর।
আর শিক্ষার্থীদের জন্য তো আরো কষ্টের। তাই করোনায় শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে এবং স্বল্প খরচে ছাত্র ছাত্রীদেরকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের বিকল্প নেই। বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ খুব একটা দূরে নয়।
বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদেরকে তাদের স্কেলের শতভাগ বেতন দেয়া হয়। দুটি উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, কম করে হলেও বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতাও দেয়া হয়। বিভিন্ন সময় প্রদত্ত মহার্ঘ ভাতাটাও তারা পান। এযাবৎ কালের সকল জাতীয় পে স্কেলের আওতায়ও আনা হয়েছে তাদেরকে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যায় বাৎসরিক ৫% প্রবৃদ্ধিও দেয়া হয়েছে তাদেরকে।
কম করে হলেও রয়েছে অবসরে এককালীন সুবিধা।বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রচুর বরাদ্ধ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ছাত্র বেতন, স্হাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, জেনারেল ও রিজার্ভ ফান্ড সহ বিভিন্ন ধরনের আয়ের উৎস।
এসব আয় যদি সরকারি কোষাগারে নিয়ে নেয়া হয় তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে সরকারের বাড়তি তেমন একটা খরচ হবে না - এমনটিই মনে করেন আন্দোলনরত শিক্ষক নেতারা। সরকার যদি ইচ্ছা করেন তাহলে জাতীয়করণের কাজটি তিন ধাপে খুব সহজেই করতে পারেন। প্রথম ধাপে- শুধু চাকরির নিরাপত্তা প্রদান করে জাতীয়করণ ঘোষণা। দ্বিতীয় ধাপে- বাড়ি ভাড়া, বোনাস, ও মেডিকেল ভাতা প্রদান। তৃতীয় ধাপে- পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান।
মোট কথা হলো, এই মুহুর্তে প্রয়েজন শিক্ষক নেতৃবৃন্দের একত্রিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে বিষয়টি বুঝানো। আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জাতীয়করণের হিসাবটি তুলে ধরতে পারলে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ সময়ের ব্যাপার মাত্র।
লেখক: প্রভাষক, জিরাইল আজিজিয়া ফাজিল মাদরাসা বাকেরগঞ্জ, বরিশাল।