মুজিববর্ষে জাতীয়করণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খোলা চিঠি
প্রদীপ কুমার দেবনাথ :
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষকদের ( স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা) পক্ষ প্রথমেই আপনার প্রতি রইল আদাব। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির জনক, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রবক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আজ বেসরকারি শিক্ষক সম্প্রদায় আপনার কাছে একটা ছোট্ট উপহার চায়। সেটা জাতীয়করণ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা জানি, আপনি উদার রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি, গণতন্ত্রের মানসকন্যা, শান্তিপ্রিয় অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক আপনি, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আপনার শক্তিশালী অবস্থান। আপনি অর্থনৈতিক, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন আজীবন।
কিন্তু আপনি জানেন কি? আপনার প্রতি প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে অনুগত শিক্ষক সম্প্রদায় বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষক সম্প্রদায় মারাত্মক অবহেলিত। বেতনের নামে অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ দূর্বিষহ জীবন যাপন করেও আপনার প্রতি আস্থাশীল হয়ে রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষ করে দেখুন সমাজ, সংসারে ও সরকারি পর্যায়ে অবহেলার শিকার হয়েও আজীবন মানুষ গড়ার কঠিন ও জটিল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সংগ্রাম করছে প্রতিনিয়ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন বর্তমান সময়ে সুস্থভাবে চলার জন্য চাই আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতা থাকলে কোন ব্যক্তি সুস্থ চিন্তন দক্ষতার অধিকারী হয়না। আর এ কারণেই তাকে সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। সামাজিক বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে যেতে হয়। তখন সুষ্ঠ ও সঠিক চিন্তা প্রয়োগের মাধ্যমে সৃজনশীল শিক্ষা প্রদান তারজন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনি জানেন, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটানোর জন্য গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু, যে শিক্ষকরা পরিবারের ভাত কাপড়ের সংগ্রামে ব্যস্ত তাদের দ্বারা গবেষণা করা একটা প্রহসন মাত্র। আপনি সবসময়ই বৈষম্যের কথা বলেন, আপনার চোখের সামনে আমরা চরম বৈষম্যের শিকার। শুধু বেতন নামক অনুদান পাই তাই নয়।
আমাদের বদলি নেই, নেই সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা। সরকারি বেসরকারি শিক্ষকদের গ্রেডেও পাহাড়সম বৈষম্য বিদ্যমান। বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যে বেতন সে বেতনে একজন সাধারণ মানুষ একাই চলতে পারেনা। অথচ শিক্ষকগণ এই যৎসামান্য অনুদানে তাদের পরিবারের ব্যয়ভার মেটানোর বৃথা চেষ্টা করছে। চরম আর্থিক সংকটে দিনাতিপাত করা এ শিক্ষকগণ শত চেষ্টা করলেও ভালভাবে শিক্ষাদান করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করার মতো সরকারের শক্তিশালী কোন তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় শহরের প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ম্যানেজিং কমিটি মিলে অর্থের হরিলুট চালায়। তাই তারা জাতীয়করণ চায় না। এখানে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা বলতে কিছু থাকে না। ফলে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পরিবর্তে কোচিং বা প্রাইভেট প্রবণতার আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করার মতো আর কেউ থাকেনা কারণ যারা নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারা সবাই দূর্ণীতিতে ব্যস্ত থাকে। ফলে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নিরব ক্ষোভ ও নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হয়। এরা কেউ মুখ খুলে না কারণ সবাই দূর্ণীতিতে ব্যস্ত থাকে।
নিয়ন্ত্রণহীন এসব নৈরাজ্যের কারণে শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়। আপনি ভালো করে এসব প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখুন বছরে কোটি কোটি টাকা এসব প্রতিষ্ঠানের কোষাগারে থাকার কথা। এ ভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কম বেশি অর্থ বিদ্যালয় তহবিলে আসে আর যায়। অথচ একটু সচেতন হলে এসব আয় ফেরত নিয়ে আপনি জাতীয়করণের মতো সাধারণ এ দাবিটি অতি সহজেই পূরণ করতে পারেন। সরকারি কোষাগার থেকে একটি টাকাও খরচ করতে হবেনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এমনিতেই স্বল্প বেতন আবার তার উপর কল্যানট্রাস্টের খরগতো আছেই। আগে যেখানে ৬% কাটা হতো এখন সেখানে আরও ৪% অতিরিক্ত কাটা হয় কোন অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান ছাড়াই । অর্থাৎ আমরা ৯০% বেতন পাই মাত্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কিন্তু আমাদের এই মহাননেতা, কোটি বাঙালির অস্তিত্বের স্বীকৃতির মহানায়ক, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনকের কন্যা, যিনি শিক্ষকদের অত্যন্ত ভালবাসতেন বলেই একদম করুণ ও নাজুক অর্থনৈতিক অবস্থায় ৩৭,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন।
আর এখনকার অবস্থাতো অনেক স্বচ্ছল। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের দ্বারপ্রান্তে। এজন্যই বেসরকারি শিক্ষকদের দৃঢ়বিশ্বাস একমাত্র আপনার হাত ধরেই মুজিবর্ষেই জাতীয়করণ পাবে। আমরা বিশ্বাস করি আপনি শিক্ষকদের এ বিশ্বাসকে সম্মান দেখাবেন। নিশ্চিত করবেন জাতীয়করণ। আমরাও আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি জাতীয়করণ দিন, আমরা আপনাকে দক্ষ জনশক্তি দেব যারা আপনার ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সহ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে সর্বান্তকরণে সমর্থন ও কাজ করবে।
ইতি, প্রদীপ কুমার দেবনাথ শিক্ষক