দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া প্রায় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান নেই। বাকি ৬৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা রাখেন। তবে মানসিক রোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সচেতন। সম্প্রতি 'হেলিয়ন' নামে আন্তর্জাতিক জার্নালে 'মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান এবং সচেতনতা' শিরোনামে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে এই তথ্য উঠে এসেছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) পাঁচ গবেষক এই গবেষণা করেন। গবেষকরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবু বকর সিদ্দীক, মোসাদ্দিকুর রহমান অভি, তানভীর আহাম্মেদ এবং মুহাম্মদ আব্দুল বাকের চৌধুরী। এই গবেষণার তত্ত্বাবধানে ছিলেন পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টারের অর্থায়নে প্রায় দেড় বছর ধরে দেশের ৯৬টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর ওপর অনলাইনে এ গবেষণার জরিপ চালানো হয়। জরিপ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য অবনতির কারণ হিসেবে গবেষকরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অস্বাস্থ্যকর আবাসন ব্যবস্থা, অবাধ ও সমস্যাগ্রস্ত ইন্টারনেটের ব্যবহার, পড়াশোনার চাপ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক চ্যালেঞ্জ ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন।

অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, এই গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা কম, কিন্তু সচেতনতা বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীরা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে দেড় গুণ বেশি জানেন। আবার ব্যক্তিগত আয় এবং পরিবার থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান বেশি। অন্যদিকে, শুধুমাত্র পরিবারের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা নিয়ে পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ নির্বাহ করছেন এমন ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান সবচেয়ে কম।

গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সামাজিক সমস্যাকে এবং ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরিবেশ দূষণকে (শব্দ দূষণ, উৎকট দুর্গন্ধ ইত্যাদি) মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী করেছেন। অন্যদিকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছাত্র-ছাত্রী মনে করেন মানসিক অসুস্থতার জন্য দায়ী মানুষের ভাগ্য কিংবা কালো যাদু। ৪০ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী মনে করেন আধুনিক মানসিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মানসিক সমস্যার প্রতিকার করতে পারে। অন্যদিকে ৯০ শতাংশেরও অধিক শিক্ষার্থীর মতে পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি প্রদর্শন এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণ মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তুলতে পারে।

অধ্যাপক ড. মো. জামাল উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও কাউন্সেলিংয়ের জন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা এবং মানসিক রোগের জন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।